শ্রীমৎ স্বামী চন্দ্রশেখর ভারতী ১৯৯২ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহীশূর রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একজন শৃঙ্গেরিমঠের অধ্যক্ষ শংকরাচার্য ছিলেন। তিনি জীবনকে মুক্তির পথ দেখানোর কিছু উপায় উল্লেখ করেছিলেন। অবশেষে তিনি ১৯৫৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার কিছু জীবন মুক্তির বাণী (life quotes in pictures by Chandrashekhar Bharati) নিচে উল্লেখ করা হলো।-
“কোনো মানুষ যদি এক মুহূর্তের জন্যও তার প্রজাতিগত মর্যাদাটি বোঝে সে নিজেকে পশুশ্রেণির সঙ্গে সমধর্মী ইন্দ্রিয়ক্রিয়াগুলিতে পশুরও অধিক মগ্ন থাকতে লজ্জা পাবে। মানুষের আছে নৈতিক মূল্যবোধ, অনুভবের ক্ষমতা, উত্তরণমুখী জীবনবোধে জাগ্রত হওয়ার উদ্যম। সুতরাং তাকে সেই চেষ্টাই করতে হবে।”
“আমি নিজেকে ‘আমি’ বলি, তুমিও নিজেকে ‘আমি’ বলো, অপরেও নিজেকে ‘আমি’ বলে; সবাই-ই শুধু ‘আমি’। ‘সে’ কিংবা ‘তুমি’ আছো খালি ব্যবহারিক দ্বৈত স্তরে। একক ‘আমি’ই আত্মস্বরূপ, যা অদ্বিতীয়; সকলেই আসলে এক আত্মারই প্রকাশ। বহুত্ব আছে শুধু আত্মার নাম রূপাত্মক প্রকাশ সমূহে। এগুলি অপরিবর্তনীয় নয়, সুতরাং সত্য নয়। …….. আত্মাই একমাত্র অপরিবর্তনীয় তাই সত্য একমাত্র এই আত্মচৈতন্যই, যা বহুত্বের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত।”
“নিজেরা ধর্মাচারী নন এমন সহস্র পণ্ডিতের বক্তৃতার চেয়ে একজন সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তির মুখের কথা অনেক বেশি কার্যকরী আমরা আশ্রয় করি এক অদ্বিতীয় সত্তাকে, যিনি বুদ্ধিসম্পন্ন পরমাশক্তি অথবা পরম-শক্তি সম্পন্ন বুদ্ধিমান সত্তা। যখন এই মূল কারণরূপ সত্তাকে প্রথমটি সাপেক্ষে বলি তাঁকে ‘শক্তি’ আখ্যা দিয়ে থাকি, আবার যখন দ্বিতীয়টির পরিচয়ে বলি তখন তাঁকে ‘চিৎ’ আখ্যা দিই। আসলে এটি এক অদ্বিতীয় সত্তা। ইনিই ব্ৰহ্ম, আমরা শুধু বলতে পারি এটি নিত্য বর্তমান অসিত্ব,—বিশুদ্ধ ‘সৎ’। ইনিই পরমাত্মা।”
“প্রতিদিন আত্মসমীক্ষা অভ্যাস করবে……যখনই মনটা চিন্তাভারমুক্ত সতেজ থাকবে আত্মস্থ হওয়ার চেষ্টা করবে।”
“আত্মা তো সর্বদাই আমাদের হৃদয়ের চেতনায় প্রকাশমান। সেই বোধে সজাগ হওয়ার জন্য আমাদের কোনো বাহ্যিক চেষ্টারও প্রয়োজন নেই। শুধু দরকার আমাদের সত্য আত্মবোধকে আবৃত রেখেছে যে অজ্ঞানতা সেটিকে সরিয়ে ফেলা। …. যেমন মাটির তলায় রাখা ঐশ্বর্য মাটি সরালেই বের হয়ে যায় ।”
“ভবিতব্য যা থাকে তা ভোগ করতেই হয়। জীবের ইচ্ছার ‘স্বাতন্ত্র্য’ কোথায়? আমরা যা চিন্তা-ভাবনা করি তাও ‘পরতন্ত্র’, যা নির্ভর করে ‘কর্মের’ ওপর। এইরকম নিয়মবদ্ধ জাগতিক প্রবাহে থেকেও প্রকৃত নিশ্চিন্ততা পেতে হলে অবশ্য প্রয়োজনীয় পাথেয় হলো অখণ্ড ব্রহ্ম-স্বরূপ দক্ষিণামূর্তি ভগবানের শ্রীচরণে শরণাগতি।”
“মানুষের মধ্যে দৈবী ও আসুরীভাব এমনভাবে মিশ্রিত হয়ে আছে যে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তার অন্তঃকরণে স্পন্দিত হচ্ছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। তার কোনো বাহ্যিক শুভ কর্ম যেমন সম্পূর্ণভাবে গ্লানিযুক্ত হয় না; তেমনই তার অশুভ কর্মেও কোনো না কোনোভাবে পরোক্ষে কিছু ভালো দিকও উহ্য থাকেই। (প্রেয়ের গন্ডীর অতীতে দৈবী আসুরী, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তথা শুভ-অশুভের উর্ধে বিশুদ্ধ আত্বজ্ঞানের লক্ষ্যে)। প্রেয়ের পথে চলতে গেলে বিঘ্ন আসবেই যখন তখন। তাই সাধন পথের সংশয় নিরসনের জন্য সদগুরুর সান্নিধ্যে সুযোগ পাওয়া মাত্র যথাসম্ভব চেষ্টা করা উচিত। কোনো একটি নির্দিষ্ট পন্থা সবরকম সাধকের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না; তাই সদ্গুরুর প্রত্যক্ষ সহায়তা খুবই প্রয়োজনীয় ।”