shayari in bengali By brahmanand Saraswati | স্বামী ব্রহ্মানন্দ সরস্বতী বাণী

স্বামী ব্রহ্মানন্দ সরস্বতী ১৮৭১ সালে ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি খুবই অল্প বয়সে অর্থাৎ মাত্র নয় বছর বয়সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ঈশ্বর অনুসন্ধানের জন্য। এবং ৩৪ বছর বয়সে তিনি সন্ন্যাসীর দীক্ষায় দীক্ষিত হন। পরবর্তীকালে ১৯৫৩ সালে তিনার মৃত্যু ঘটে। তবে তার কিছু জীবন দীক্ষার বাণী আজও স্মরণীয়, যেগুলিকে নিচে উল্লেখ করা হলো।-

shayari in bengali
Photo by pexels.com

“যা কিছু কাজ করার সংকল্প হয় জীবনে হয়, সবই সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। তাই বেশি পরিমাণ কর্ম-পরিকল্পনা রেখো না। আগে অবশ্য কর্তব্য গুলি সম্পন্ন করো, সঙ্গে স্মরণ রেখো পরমাত্মাকে। ….ঐশ্বর্যময় পরমাত্মারূপ মূলকে ছেড়ে তাঁর প্রতিবিম্বরূপ জাগতিক সৌন্দর্য ও নাম যশের পেছনে ধাবিত হওয়া মূল্যবোধহীনতা ছাড়া আর কিছু নয়। মননশীল মানুষের উচিত আত্মসমীক্ষা করা।”

“লক্ষ্য স্থির রেখে কাজ করলে একটি লক্ষ্যপূরণের মাধ্যমেই বহু কিছু পাওয়া যায়, কিন্তু যদি একসঙ্গে বহু লক্ষ্য নিয়ে সব পেতে চাও কোনোটাই ঠিকভাবে পাবে না।….আত্মবোধে জাগ্রত হলে, বাকী সবই স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রাপ্ত হবে।”

“ব্যবহারিক কর্তব্য পালনে যা করার করো। কিন্তু মনকে ভগবদ্‌মুখী করে জীবন যাপন করো। তাতে যেমন তোমার সাংসারিক কাজও হবে, আবার অন্তর্মুখী মনন সাধনাও সহজ হয়ে যাবে।…. কেউ যদি শুধু অহংস্বাতন্ত্র্যবোধক বুদ্ধি ও ধারণার ওপর নির্ভর করে স্বার্থ-সুবিধাবাদী চেতনায় জীবনযাপনের চেষ্টা করে, সে শুধু বেদনাই পায়, যার পরিণতি শুধু অজ্ঞানান্ধকার।”

“পূর্বপুরুষদের (অনেককেই) তো জগৎ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, আমাকে, তোমাকেও যখন এই রকম যেতে হবেই, তাহলে সেই গমনটি যাতে শান্তিতে ঘটে তার জন্য আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হয় যে, কোনো দুষ্কর্মের জন্য তখন যেন অনুতাপে কষ্ট না পেতে হয়।…..তোমার চিত্ত পরজন্মেও বাহিত হবে তোমার (সূক্ষ্মদেহের) সাথে। সুতরাং মনন ক্ষমতাকে পূর্ব হতেই সত্যস্বরূপ ভগবানের সঙ্গে সম্পর্কিত করে রাখো। অনিত্য জীবজগতের নিত্য অধিষ্ঠান তিনিই।”

“অহংবদ্ধ চেতনার চিত্তরিপুগুলি হলো, উচ্চাশা, ক্রোধ, লোভ, আসক্তি, দম্ভ ও ঈর্ষা। এই ষড়ভুজটি জান্তব থাবার মতো (সংস্কারের) ভেতর থেকে বের হয়ে কাজ করে। …..এই মূল শত্রুটিকে ঘায়েল না করলে বাইরের শত্রুরা পরাস্ত হবে না, বরং বেড়ে যাবে।……অনেকে মনে করেন একজন সর্বত্যাগী সিদ্ধমানবই শুধু ষড়ভুজটি ভাঙ্গতে পারেন। —ধারণাটি ভুল ; কারণ সেই ত্যাগী তো ষড়ভুজের মূল কারণটিকেই ত্যাগ করছেন, ফলে সেটিকে ধরে আবার ভাঙ্গার প্রশ্নই তাঁ নেই। কিন্তু যে সংসারীকে জাগতিক সক্রিয়তায় থাকতে হয়…….বিশেষভাবে তারই প্রয়োজন ওই ষড়ভুজ বিনাশে বিজয়ী হওয়ার। ..যখন চিত্ত থেকে এই ছটি রিপু চলে যায়, স্বাভাবিক ভাবেই মনোবৃত্তি ঘুরে যায় সত্যস্বরূপ ঈশ্বরের দিকে। তারপর সে যাই করে, তার মূলে কোনো স্বার্থকেন্দ্রিকতা থাকে না, থাকে কর্তব্যপরায়ণতা মাত্র। তখন তার চেতনা স্বাভাবিকভাবেই এমন হয়ে যায় যে সে আর অনিত্য কোনো ব্যাপারেই প্রভাবিত হয় না। এমন মানুষকেই বলে সমদর্শী নিরপেক্ষ তথা মহাবিজয়ী।”

“জগৎকে মিথ্যা বলা হয় তার নিত্য পরিবর্তনশীলতার জন্য। ক্ষুদ্রতম থেকে বৃহত্তম সকল জাগতিক প্রকাশকেই পরিবর্তিত হতেই হয়। জীবের জন্ম-মৃত্যুও অবিরাম চলেছে। তাই কোনো কিছুই নিত্য নয়, একমাত্র অপরিবর্তনীয় ব্রহ্মস্বরূপ পরমাত্মাই নিত্যসত্য।”

Leave a Reply