কুলাদানন্দ ব্রহ্মচারী ১৮৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একদিকে ছিলেন যেমন হিন্দু ধর্মের বিশিষ্ট সাধক, তেমনি অপরদিকে ছিলেন একজন লেখক। ইনি বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর শিষ্য ছিলেন। অবশেষে এনে ১৯৩০ সালে মারা যান। এনার কিছু বাণী নিচে উল্লেখ করা হল।
“মানব জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য আত্মার চরম উৎকর্ষ সাধন।….আত্মার প্রকৃত সন্ধান না পেলে কিছুতেই শান্তিলাভ করা সম্ভব নয়।…. তাতে সিদ্ধকাম হতে পারলে জগতের উন্নতি আপনি থেকেই হতে থাকবে।”
“যেমন গন্তব্যস্থানে যেতে গেলে পথে অনেক দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়, তেমনি সাধনার পথে যতই অগ্রসর হওয়া যায়, ততই নানারূপ সিদ্ধি ও শক্তি আসতে থাকে। দৃশ্য নিয়ে মেতে থাকলে গন্তব্যস্থানে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। তেমনি ঐশ্বর্য নিয়ে থাকলে ভগবৎ প্রাপ্তি বিলম্বিত হয় এবং কখনো কখনো সুদূরপরাহতও হয়।”
“ভগবৎসম্বন্ধ স্থাপন করাই মানবজীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য। তাই সমুদয় কার্যই ভগবদুদ্দেশ্যে… করতে হয়। ……ভালো কাজ করার প্রবৃত্তি যখন আসে তখনই তা করে ফেলতে হয়। ……অভিমান এলেই সর্বনাশ। ….সকাম প্রার্থনা করতে করতেই নিষ্কাম প্রার্থনা হয়ে যায়। …শুধু ইষ্টনাম জপ করলেই হবে না। তাঁকে স্মরণ করা চাই। ‘গুরু’ শরীরটা নয়, যে শক্তিতে (প্রকৃত দীক্ষা) হয় তাই গুরু। গুরু ভগবানের প্রতিপক্ষ। এক গুরু নিষ্ঠাতেই সব কিছু হয়।…..গুরুবাক্য নির্বিচারে প্রতিপালন না করলে, গুরুত্ব সম্যক উপলব্ধি করা যায় না । বৃথা উপদেশে কিছু কাজ হয় না ৷”
“সাধুরা তাঁদের জ্ঞান-বিশ্বাস মতে নিজেদের রীতি অনুযায়ী জগতের কল্যাণ করে থাকেন।…তাঁরা নিজাসনে থেকেই এমন সব কাজ করে যান, যার শক্তি বিশ্বের কল্যাণ সাধন করে। স্থূলদৃষ্টিতে তা দেখা যায় না বটে, কিন্তু সে শক্তি অমোঘ। কেউ কেউ নিজে (প্রয়োজনানুরূপ) না খেয়েও অর্থ সঞ্চয় করে সুখ পায়। ‘আমার তো অর্থ আছে’। কেবল এই কথা ভাবতেই তার সুখ, (অনেকের কাছে তো) ভোগ বিলাসের অভাবই ‘অভাব’ মনে হয়। বেশি অর্থ থাকা একটি বিশেষ অন্তরায়।….আকাঙ্খার কিছুতেই নিবৃত্তি হয় না। দিনরাত অর্থ সঞ্চয়ের জন্য দারুণ পরিশ্রম করে, কিন্তু কিছুতেই তার শান্তি হয় না।”
“চিরকালই কি একভাবে যায়? তা প্রকৃতির নিয়ম না।….ঠাকুরের অলঙ্ঘনীয় নিয়মেই সব হচ্ছে, সুখ-দুঃখ সম্পদ-বিপদ সমস্তই তাঁর ব্যবস্থানুরূপ ঘটছে। ঠাকুর কী ভাবে কার কল্যাণ করেন, বোঝা বড় শক্ত।”
“কোনো গুণী ব্যক্তিরই এমন কোনো গুণ নেই, যা কোনো দুর্জন (বিকৃতভাব দ্বারা) কলঙ্কিত না করে…তাই বলে থেমে থাকলে তো চলবে না, সাধ্যমত সমাজ-সেবা করতে হবে। নিন্দা প্রশংসা তুচ্ছ করে জনকল্যাণব্রত পালনের পথে এগিয়ে যেতেই হবে।”
“সকল অবস্থায় চিত্তের ধৈর্য ও সন্তোষ যদি এক প্রকার না রইল, তাহলে ভগবানের আশ্রয় গ্রহণের সার্থকতা কী?….অন্তর ঠাণ্ডা রেখে যা পারো করে যাও। যা হবে তা ব্যবস্থাবদ্ধ আছে, তার কিছুতেই অন্যথা হবে না, এবং তার দ্বারাই যথার্থ কল্যাণ হবে।”