শ্রীমৎ বলরাম স্বামী ১৮৪৩ সালে ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একজন বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী বৈষ্ণব সদগুরু ছিলেন। তিনি জীবনকে ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য উপদেশ দিতেন। যাতে মানুষ সকল ঈশ্বর উপলব্ধি করতে পারে। অবশেষে ১৯৩১ সালে ইনার জীবনাবসান ঘটে। এনার কিছু বানী নিচে উল্লেখ করা হল।-
“নরনারীর প্রত্যেকের, এমনকি চেতন ও অচেতন প্রত্যেক বস্তুরও নিজ নিজ মর্যাদা আছে। তাদের মর্যাদা কখনো নষ্ট করা উচিত নয়।… এ সংসারে সকল বস্তুই প্রভুর দ্রব্য।”
“ভগবদ্ কার্যের জন্য রাখা কোনো বস্তু অন্য কোনো স্বার্থ বা ভোগ ব্যাপারে ব্যয় করলে সেই ব্যক্তির ঘোরতর অপরাধ হয়; যে ব্যক্তি এই কর্মে সহায়তা করে সেই ব্যক্তিও ততোধিক অপরাধী হয়ে যায়।”
“অজ্ঞানতাই জীববোধে দেহকে আত্মা বলে ধারণা করায়। ‘দেহাত্মজ্ঞান’ অহংকারের মূল। এই অহংকারই সংসার পরিত্রাণের প্রধান বিরোধী। জীবের স্বাতন্ত্র্যবোধ হচ্ছে অতি প্রবল শত্ৰু। কিছুতেই এই স্বাতন্ত্র্য (অহং অভিমান) ত্যাগ করতে ইচ্ছা হয় না।”
“ত্রিবিধ অভিমান পরিত্যাগের চেষ্টা করবে,—পাণ্ডিত্যাভিমান, অভিজাতাভিমান ও বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কের অভিমান।”
“দেহের পীড়ায় ক্লেশ হলে অস্থির হয়ো না। বরং ধৈর্য অবলম্বন করে, কষ্টে নিজের ভোগ কেটে যাচ্ছে, —মনে করে খুশি হতে শেখো। ভজন করলে (প্রারব্ধের) দুঃখ কষ্টের হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়, যেন আমরা না ভাবি।…..(প্রয়োজন) অবশ্যম্ভাবী দুর্ভোগকে সহ্য করার মনোভাব ও ক্ষমতা অর্জন।”
“সকল ইন্দ্রিয়ের দ্বারা শ্রীভগবানের কৈঙ্কর্য (দাসত্ব) করবে।…..সাধারণের দুঃখ দর্শনে…..তাদের দুঃখ দূরীকরণার্থে শ্রীভগবানের চরণে প্রার্থনা করবে।”
“আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব সকলেই ‘নার’ (নিত্য) বস্তু নারায়ণের সঙ্গে সম্বন্ধিত— এই ভাবে চিন্তা করবে। জগতের যাবৎ জীবকেই এইভাবে ভাবলে, অর দ্বারা সকল জীবই তোমার সম্বন্ধিত সত্তা হয়ে পড়বে।….তখন যাবৎ সাংসারিক কার্যকে ভগবানের কার্য ভেবে তাতে কৈঙ্কর্য বুদ্ধি আসবে।…. সন্তানকে ভগবদ্মুখী করা পিতা-মাতার অবশ্য কর্তব্য।”
“এই শরীর ভবসাগর পার হবার দৃঢ় নৌকা। গুরু কর্ণধার, ঈশ্বর অনুকূল বায়ু।… মনুষ্য দেহ ভজনানুকূল….এই হেতু মানুষদেহ অন্যান্য সমস্ত জীবদেহ হতে শ্রেষ্ঠ।”
“মন্ত্রজপ করার সময় অর্থ বোধের সঙ্গে করা উচিত। সেই সময় মন্ত্রের দেবতার ধ্যান আরও ভালো। প্রথম শ্রীচরণধ্যান, তারপর আপাদপস্তক শ্রীবিগ্রহের ধ্যান করা শ্রেষ্ঠ।”
“সর্বদা তোমার আত্মার অনুসন্ধান করো, দেহের নয়।…… সঙ্গে সঙ্গে পরমাত্মার অনুসন্ধান ক্রমে ক্রমে অভ্যাস করো।”
“ভগবৎ বিষয়ে মানের একাগ্রতা আবশ্যক। তার উপায় একমাত্র ভগবানের চরণে একান্ত শরণাগতি ।… ভগবানকে লাভ করার জন্য জীব যতো ব্যাকুল, জীবকে পাওয়ার জন্য ভগবান তদপেক্ষা অনেক বেশি ব্যাকুল।”