শ্রীমৎ স্বামী শিবানন্দ ১৮৫৪ সালে ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইনি ছিলেন একজন হিন্দু ধর্মের যোগাকৃত ব্যক্তি। এবং ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক মানুষ। ঈশ্বরকে পাওয়ার নানা পথ তিনি অবলম্বন করতেন। অবশেষে ইনি ১৯৩৪ সালে শেষ জীবন ত্যাগ করেন। এনার কিছু উপদেশ নিচে উল্লেখ করা হলো।-
“মানুষ কখনো গুরু হতে পারে না যখন কোনো সদ্গুরু দীক্ষা দেন, তখন স্বয়ং ভগবানই গুরু—হৃদয়ে অবির্ভূত হয়ে শিষ্যের প্রাণে শক্তিসঞ্চার করেন।”
“ব্রহ্ম সর্বানুস্যূত (তিনি) প্রতিমাতেও থাকবেন না কেন? ….ধর্ম প্রত্যক্ষ আধ্যাত্মিক অনুভূতির বিষয়।”
“ভগবানের নাম, তাঁর ভজন করতে করতে সংযম আপনা হতেই আসবে। তবে খুব প্রেমের সঙ্গে নাম করতে হবে। …তাঁর ওপর আপনবোধ এসে গেলেই নিশ্চিন্ত। কিন্তু যতদিন মন নিম্নভূমিতে থাকে, ভগবানের ওপর ঠিক ঠিক ভালোবাসা আসা সম্ভব নয়।”
“ধ্যানভঙ্গের পর আসনে বসেই কিছুক্ষণ ধ্যানের বিষয় ভাবতে হয়। এরপর ধ্যানের অনুকূল স্তবাদি পাঠ করতে হয়। তাতে ধ্যানের ভাব ও আনন্দ আরও ঘনীভূত হয়। আসন ত্যাগের পরও খানিকক্ষণ কথাবার্তা না বলে স্মরণ মনন করতে হয়।”
“বাস্তবিক পক্ষে, ভজন-সাধন দ্বারা তিনি যে “লভ্য” একথা বলা চলে না, কারণ প্রত্যেক জীবের স্বরূপই তিনি; তিনি সকল প্রাণীর অন্তরাত্মা। যে সব আচরণের দ্বারা জীবের অন্তর্দৃষ্টি রুদ্ধ হয়ে থাকে, ভজন-সাধন সেই সব আচরণ দূর করে মাত্র। তখন জীব স্ব-স্বরূপকে জানতে পারে। অন্তরাত্মার সঙ্গে এক হয়ে যায়।”
“হৃদয়ে ভগবৎপ্রেম, ভক্তি থাকলে ..সন্তোষ সদা বিরাজমান থাকে এবং ভক্তের যা কিছু অভাব প্রভুই সব পূরণ করে দেন।”
“ভক্ত জানে, যে ভগবান সুখ দিচ্ছেন, তিনিই আবার দুঃখ কষ্টও দিচ্ছেন। তাই ভক্ত সবই শ্রীভগবানের দান আশীর্বাদজ্ঞানে সহ্য করতে পারে। সংসারে সুখ যেমন অনিত্য দুঃখও তেমন অনিত্য। একমাত্র নিত্যবস্তু শান্তির আলয় হলেন শ্রীভগবান।”
“যেমন দেহ-মনের ক্রমবিকাশ হতে হতে শিশু বালকত্ব, যুবত্ব, প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্যে উপনীত হয়, তেমনি জীবের মনে ভগবদ্ভাব স্ফুরণেরও স্তর আছে, ক্রম আছে। অবশ্য শ্রীভগবান ইচ্ছামাত্র একদিনে সব জীবকে মুক্ত করে দিতে পারেন, কিন্তু তিনি তা করেন না—নিয়মের ব্যতিক্রম হতে দেন না, বিশেষ কারণ না হলে।”
“ ‘তাঁর’ মাধ্যমে জীবের সেবা করো, আর জীবের মধ্য দিয়ে ‘তাঁর’ সেবা করো।”
“শাস্ত্রে তো ভগবানলাভের উপায় সম্বন্ধে নানাভাবের উপদেশ রয়েছে। কিন্তু শেষ কথা হলো শরণাগতি।”
“এই যে জীবদুঃখে কাতর হয়ে (জীবোদ্ধারের জন্য) স্থূলদেহ ধারণ করে (ভগবান জগতে অবতীর্ণ হন, এই তো সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে, তিনি কৃপাসিন্ধু ।”
“মনে, মনে, জপ করাই শ্রেষ্ঠ। প্রথম প্রথম সংখ্যা রেখে করা ভাল। …ধীরে ধীরে তাঁর নাম নিলে হৃদয়ে আনন্দ ও প্রেমানুভব অধিক হয়; সংখ্যা অধিক হোক বা না হোক নজর ভাবের দিকেই রাখা চাই। …জপের দ্বারা কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণ হয়। বীজ ও নাম অভেদ।”