Dayananda Saraswati Quotes | দয়ানন্দ সরস্বতীর ১৫টি অনুপ্রেরণামূলক বাণী

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ১৮২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বর্তমান ভারতের গুজরাট রাজ্যে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জন্মকালীন এনার নাম রাখা হয়েছিল মূলশঙ্কর কর্ষণদাস তিওয়ারি। পরবর্তীকালে যখন ইনি সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করেন, তখন থেকে এনার নাম দয়ানন্দ সরস্বতী রাখা হয়। ছোটবেলা থেকেই এনার ধর্ম উপাসনার প্রতি গভীর আকর্ষণ ছিল।

ইনি একদিকে ছিলেন যেমন হিন্দু ধর্মগুরু ও সমাজ সংস্কারক,  তেমনি অপরদিকে ছিলেন একজন লেখক এবং আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা। ভগত সিং, আশফাক উল্লাহ খান সহ মহাদেব গোবিন্দ রানাডে ও লালা রাজপথ রায় ইনার মতাদর্শে প্রভাবিত হয়েছে। অবশেষে ইনি ১৯৮৩ সালের অক্টোবর মাসে বর্তমান ভারতের রাজস্থানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এনার কিছু উপদেশ নিচে উল্লেখ করা হলো।-

Dayananda Saraswati Quotes
Photo by pexels.com

“সরল ব্যবহার করবে। বড়াই করে কিছু বলবে না। দেহ ও বসন পরিষ্কার রাখবে। কথা দিলে সাধ্যমত পূরণ করবে। ব্যভিচারী হবে না। উত্তমের সম্মান করবে; কাউকে অপমান করবে না। অকৃতজ্ঞ হবে না। আলস্যপরায়ণ হবে না। গুণগ্রাহী হবে।”

“সর্বজ্ঞ, নিরাকার, সর্বব্যাপী, জন্মরহিত, অনন্ত সৃষ্টি – পালন – সংহারকারী সর্বশক্তিমান তথা সত্য ও ন্যায়ানুসারে জীবদের কর্মফলদাতা, পবিত্র গুণ, কর্ম ও স্বভাববিশিষ্ট সচ্চিদানন্দ স্বরূপ সত্তা, যিনি ব্রহ্ম ও পরমাত্মা নামে পরিচায়িত, তিনিই পরমেশ্বর।”

“সত্যবাদী পক্ষপাতরহিত, সর্বহিতৈষী সর্বজনীন সুখে প্রযত্নশীল জ্ঞান ধার্মিক ব্যক্তি অর্থাৎ ‘আপ্ত পুরুষ”-গণের উপদেশ আচারব্যবহার এবং সিদ্ধান্তের অনুকূল যা সেটি সত্য আর যা বিপরীত তা মিথ্যা বলে জানবে।”

“(ধ্যানযোগের অন্তর্গত) প্রাণায়ামের যথাযথ নিয়মিত অভ্যাসে জীববোধের অজ্ঞানাবরণ ছিন্ন হতে থাকে এবং আধ্যাত্মিক বোধের উন্মীলনে অগ্রগতি হয়। যার পরিণতিতে জীব নিজের মধ্যেই অন্তর্যামী ভগবানের আনন্দঘন বোধে সমাহিত হয়ে যায়।”

“কাম-ক্রোধ-লোভ—মোহ—ভয়—শোক আদিভাব বর্জন করবে। মাদক দ্রব্য কদাপি সেবন করবে না। নিজেকে বড়মানুষ বলে মনে করবে না। কাউকে ছোট বা বড় বলে (ব্যবহারে) ভেদ করবে না। বৃথা বাক্য ব্যয় করবে না। হঠকারী মানুষ থেকে দূরে থাকবে।”

“যে পরমসত্তা বিমল সুখদায়ক পূর্ণকাম, তথা ব্যাপ্ত তিনিই বেদজ্ঞান দ্বারা লভ্য ব্রহ্ম। যে মানুষ এই ব্রহ্মের বিদ্যমানতা নিজের অন্তঃকরণে প্রকাশিত বোধ করেন, তিনিই ভগবদ্ আনন্দের অধিকারী।”

“যা লাভ করে মানুষ শুভ গুণসমূহ গঠনে সমর্থ হয় এবং কু-সংস্কার ও দোষসমূহ পরিত্যাগ করে, সদা সন্তোষে থাকতে পারে তাকে শিক্ষা বলে।”

“আৰ্য জীবনাদর্শ কু-সংস্কার ও সাম্প্রদায়িক বিভেদ-সমূহ সমর্থন করে না বরং স্বধর্মের গভীর দিকগুলির উন্মোচনে ব্রতী তথা জগতের সকল ধর্মমতের প্রতি মর্যদাসহ স্বদেশের মত সর্বদেশের সকল নরনারীকেই মনুষ্যত্বের মূল্যবোধে সমদৃষ্টি প্রদানকারী।”

“গৃহস্থাশ্রমে সন্তানগণ যাতে সত্যাবাদিতা, শৌর্য, ধৈর্য ও প্রফুল্লতা প্রভৃতি গুণপ্রাপ্তি হয় এবং তারা যাতে কু-আচরণ প্রভাবে বিদ্যা ও ধর্মবিরুদ্ধ কু-সংস্কার ও ভ্রান্তিজালে পতিত না হয় সে বিষয়ে শিক্ষা দেবে। যাতে তাদের কোনো মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস না হয় সেই সম্বন্ধেও উপদেশ দেবে।”

“যদি কেউ তোমার কথার বিরোধিতা করে তার ওপর ক্রুদ্ধ হবে না। অন্যে যা বলছে মনোযোগ সহকারে তা শুনে যদি কোনো কথায় অসত্যের আভাস পাও, অবশ্যই সে কথা খণ্ডন করবে, এবং যা সত্য তা প্রসন্নভাবে স্বীকার করবে।”

“যে মানুষেরা এই সংসারে নিঃস্বার্থ ভালবাসা, ধর্ম, বিদ্যা, সৎসঙ্গ, বিবেক, বৈরীভাবহীনতা, জিতেন্দ্রিয়তা ও প্রত্যক্ষবোধ আদি বিষয় দ্বারা পরমাত্মাকে আশ্রয় করে তারাই অত্যন্ত ভাগ্যবান। কেননা যথার্থ জ্ঞানলাভের দ্বারা তারাই সকল দুঃখ থেকে সম্পূর্ণ নিষ্কৃতি পায় এবং ভবসাগর অতিক্রম-পূর্বক পরমাত্মার আনন্দস্বরূপ মোক্ষসুখ লাভ করে। কিন্তু যারা ভোগ্য বিষয় ও ইন্দ্রিয়ে আসক্ত যারা বিবেচনাহীন, অসৎ, অধার্মিক, ছল, কপট, অভিমানী, দুরাগ্রহী তথা সৎসঙ্গ বর্জিত তারা কখনো মোক্ষসুখ পেতে পারে না, কারণ তারা (সত্যস্বরূপ) ঈশ্বরবিমুখ।

মনুষ্যেতর প্রজাতিসমূহে বলবান প্রাণী দুর্বলকে ভয় দেখিয়ে পীড়ন করে স্বার্থের জন্য প্রাণ পর্যন্ত হরণ করে। যে মানুষ এইরূপ পশুবৎ আচরণ করে সে মনুষ্যেতর জাতির মধ্যে গণ্য। কিন্তু যে দুর্বলের প্রতি সহানুভূতিশীল ও উপকারপ্রবণ, যে পীড়নকারীকে ভয় না করে তার হাত থেকে দুর্বলকে রক্ষাকারী সেই প্রকৃত ‘মানুষ’।”

“ঈশ্বরের আনন্দস্বরূপে স্বীয় আত্মবোধকে নিমগ্ন করার নাম উপাসনা।”

“ঈশ্বরের স্তুতি, প্রার্থনা ও উপাসনা করা, ধর্মের আচরণ ও পূণ্য কার্য করা, সৎসঙ্গ, বিশ্বাস, তীর্থসেবা, মহৎ লোকেদের সান্নিধ্য এবং পরোপকার প্রভৃতি যাবতীয় উত্তম কার্য করাকে তথা সকলপ্রকার অন্যায় কর্ম থেকে পৃথক থাকাকে ‘মুক্তির সাধন’ বলা হয়।”

“সদা পরমেশ্বরের ধ্যান, যোগাভ্যাস ও সত্যধর্মে নিষ্ঠা রেখে অর্ধমের বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকবে।—সদাচারই ধর্ম তার বিপরীত অধর্ম। ধর্মাচরণে সুখ আর অধর্মাচরণে দুঃখরূপী ফলপ্রাপ্তি হয় ।”

“আর্যাদর্শে জীবনের লক্ষ্যই হলো, সমস্ত অশুভ ব্যাপারে বিরোধিতা করা, এবং মননে, বাক্যে ও ক্রিয়ায় সত্যের সেবা, ধর্মের ঐক্যবোধ রক্ষা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ দূর করা, মৈত্রীসূচক ব্যবহারের প্রসারণ তথা পরিবারসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তার বিনিময়ে মানব সমাজে শান্তিময় প্রগতি। সর্বশক্তিমান পরমেশ্বরের কৃপায় এবং প্রজ্ঞাবানগণের সহায়তায় এই শুভেচ্ছাবাণী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক, যাতে প্রতিটি নর ও নারীর জীবনে ধর্ম, সম্পদ, দিব্যসুখ ও মুক্তির পথ প্রসারিত হতে পারে; জগতের সর্বত্র বিরাজ করতে পারে শান্তি, সমৃদ্ধি ও আন্দময় অভিব্যক্তি।”

Leave a Reply