শ্রীমৎ তারাচরণ : পরমহংস ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন এবং ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান। তিনি ১৯৪৮ সালে এর জীবন ত্যাগ করেছিলেন।
“চরিত্রই প্রধান জিনিস। কঠোর পবিত্রতা গ্রহণ করাই ধর্ম; গতানুগতিক ভাবে ধর্মজীবন সম্বন্ধে নানা কথা বলা হয়, কিন্তু স্তরে স্তরে উঠলে বোঝা যায়, ওইগুলিই সব নয়।”
“কু—প্রবৃত্তিকে জয় করো। মোহকে দৃঢ় মনোবৃত্তি দিয়ে দমন করতে হয়। নিজে অন্যায় করলে, নিজেকে নিজেই শাস্তি দিও।”
“জীবনকে যদি শান্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে চাও, তবে দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ভগবৎ-সান্নিধ্য রেখো। ভগবানের ওপর নির্ভরতা, বিশ্বাস ও ভক্তি রেখে সংসারে চলবে; সন্তানদের সৎ-শিক্ষা দেবে। ধর্মের নামে অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। জাতিবন্ধন দূর করে এক হতে হবে— প্রাণে মিলতে হবে; দেহে মনে, …এক পরম ভগবান ও সত্যমন্ত্র নিয়ে (হৃদয়ের) মিলনমন্দির সৃষ্টি করতে হবে। বিশ্বই আমার গুরু।”
“ভগবান সর্বত্রই আছেন, – এখানেই আছেন, মুখ থেকে যে শব্দ বের হচ্ছে তাও তাঁরই শক্তিতে। আমরা শুধু সেই দৃষ্টিতে দেখতে পাই না বলে দেখি না।”
“জ্ঞান ও অজ্ঞান সত্যেরই দ্বৈতরূপ। জগৎ ব্যাপার সত্যের বিশ্বরূপ। অন্তহীন কাল ও দেশ অহরহ সত্যেরই নিখিল রসমূর্তি পরিগ্রহ করছে।”
“মন্ত্র আর কী? সত্যই মন্ত্র। হৃদয়ের বীজ যদি না জাগে, বাইরের শব্দ মন্ত্র দিয়ে কী হবে? ‘সৎ’ যেখানে সত্য সেখানে। ‘সত্যকে’ কে গ্রহণ করো, (মুক্তির) পথ পরিষ্কার করো।”
“রোগ, দুঃখ সমস্ত ক্ষণিকের, প্রশান্ত আকাশে মেঘের মত আসে যায়, কিন্তু আকাশ চিরকাল নির্মল। আত্মচৈতন্যও তদ্রুপ।”
“ধর্মবোধে জেগে উঠলে, সকলে নিজের কল্যাণ নিজেই আনতে পারবে। যারা সবাইকে আপনার বলে ভাবে, তারাই জগতের কল্যাণকারী। বিশ্ব যদি তোমার আপনার হয়, তবে তো আর তুমি পৃথকই থাকো না ।”
“সত্য অনুভবের বস্তু। বলা অতি সহজ, গ্রহণ করা বড় কঠিন। সত্যের কণিকাও যদি কেউ গ্রহণ করতে পারে, তাহলেই তার জীবন ধন্য হবে। (স্বরূপতঃ) নিজেকে নিজে বুঝতে হবে, চিনতে হবে। মনে মুখে এক হতে হবে। বিবেককে জাগিয়ে রাখতে হয়।”
“এ সংসারে সমস্তই ভগবান। আমিও ভগবান, তুমিও ভগবান,—যে কথা বলছি তাও ভগবান। (জাগতিক ভোগাসক্তিতে) ত্যাগ না এলে কি ভগবান মেলে? ত্যাগ, ভেতর থেকে না এলে হাজার শাস্ত্র অধ্যয়নেও হয় না।”
“সংসারের ক্ষণিক সুখের মোহে লালায়িত হয়ে আমরা …অনন্তসুখ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করছি। অসীম আনন্দের জগৎ পড়ে রয়েছে, সেদিকে আমাদের লক্ষ্য চাই।”
“মন পরিষ্কার করো, নইলে সব কাজ, স্তোত্র-মন্ত্র পড়া মিথ্যা। যদি হৃদয়াকাশে সত্য মন্ত্রকে সৎ-চিৎ-আনন্দরূপে বিকশিত করতে পারো, তবেই পরম সত্যকে পাবে। গুরু-মন্ত্র-পূজা ছাড়াই ভগবান পাবে। পূর্ণতা লাভ করবে।”
“সত্য সনাতন অনাদি অনন্ত, জ্যোতিঃস্বরূপ। …চরম সত্য অখণ্ড অব্যয়। ….মা-ই অখণ্ড সত্য। মা-মন্ত্ৰ পবিত্র আদ্যাশক্তি মন্ত্র।”