স্বামী অদ্ভুতানন্দ ভারতের বিহার রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এনার জন্মতারিখ অজ্ঞাত রয়েছে অর্থাৎ জানা যায়নি। ইনি শ্রীরামকৃষ্ণের একজন বিশেষ শিষ্য ছিলেন। ইনি ছিলেন একজন সৎ , নিষ্ঠাবান মানুষ। জানা গিয়েছে যে ইনি সারারাত ধরে ধ্যান করতেন। অবশেষে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ইনি ১৯২০ সালের এপ্রিল মাসে ভারতের বেনারসে মারা যান। এনার কিছু বাণী নিচে উল্লেখ করা হল।-
“ধ্যান ধারণা (লোকে) করবে কী করে, চিত্তশুদ্ধি না হলে? সৎ-কাজ না করলে (কারোর) চিত্তশুদ্ধি হয় না। চরিত্রই প্রধান। চরিত্র ভালো না হলে (তার) ধ্যান- জপ কি হবে? সাধন ভজন করতে করতে তবে তো এগোতে পারা যাবে। অসৎ চিন্তা একদম করবে না। সৎ কাজ করলে নিজেরও কল্যাণ, পরেরও কল্যাণ।”
“তুমি আছো আর তোমার ইষ্ট আছেন, এ জগতে আর কেউ নেই,—একেই বলে ধ্যান। ধ্যানে একই ইষ্টের মূর্তি নানা দেবদেবীর রূপ ধরে আসেন। রূপ বহু হলে কী হবে? স্বরূপে তো কোনো গণ্ডগোল নেই। সবই ইষ্ট্রের লীলা ।”
“এই বিশ্বজগৎ তাঁর ইচ্ছাশক্তিতে চলছে। তিনি স্বয়ং যাকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, প্রত্যক্ষ দেখিয়ে দিচ্ছেন, সেই কেবল তাঁর এই অনন্ত খেলা ধরতে পারছে।….ঠিক ঠিক ডাকলে ভগবান বুঝিয়ে দেন, সংশয় রাখেন না।”
“যতক্ষণ ভেদবুদ্ধি, ততক্ষণ দলাদলি।….জ্ঞান না হলে ভেদবুদ্ধি যায় না।…তাঁতে অভেদস্থিতি না হওয়া পর্যন্ত দুঃখ সংশয় যাবার নয়। অদ্বৈতবোধ এলে আর সাম্প্রদায়িক ভাব থাকে না।”
“সংস্কারের বশেই মানুষ ভালোমন্দ সবরকম কাজ করে থাকে। কোনো বিষয়ে জোর করে ত্যাগ হয় না। (মোহ) ত্যাগ না হলে তাঁকে বোঝবার জো নেই।… অভ্যাসযোগ দ্বারা কু-প্রবৃত্তির নিবৃত্তি হয়।”
“আপন খেয়ালে চললে মানুষ বিগড়ে যায়। যে কাজই করবে, একটু বিচার করে করবে এবং পারো তো পাঁচজনের পরামর্শ নিয়ে করবে। নিজের গোঁয়ে করলে কোনো কোনো কাজে শেষে অনুতাপ হয়। ….. (সত্যিই) যে জানে ভগবান আছেন, সে কি অন্যায় করতে পারে!”
“তাঁর প্রকাশ যখন যে মানুষের মধ্যে নামে, তখন সে লোক তাঁকে প্রচার করবার শক্তি পায়।”
“যে কাজটি করবে প্রীতির সাথে করবে। তা যদি না পারো করবে না। বিরক্ত হয়ে কোনো কাজ করলে ফল দুঃখময় হয়। ……একসঙ্গে (অনেকে) থাকতে গেলে ..যতোদূর দুটো উঁচু নিচু কথা হয়েই থাকে, তা কি সব সময় মনে রাখতে হয়? সম্ভব বিচার করে সঙ্গ করা উচিত।… ঝট করে কাউকে দোষী মনে করা ভুল।….. নির্দোষ মনে দুঃখ দিলে ভুগতে হবেই। নিজের দুঃখ না হলে লোকে পরের দেখতে হয় নিজের চেয়ে আরও কতো দুঃখী আছে। দুঃখ বুঝতে পারে না। তাহলে দুঃখ সহ্য করার শক্তি আসে।…. মানুষ নরম হলে, (স্বার্থপর) লোকে পেয়ে বসে। .. (কারোর) হাজার ভালো করো, যদি একটু মন্দ হয়েছে তো, (তার কাছে) তুমি মন্দ হয়ে যাবে। যাঁরা বিবেকীপুরুষ, তাঁরা জীবের এ (স্বভাব) ধর্ম জানেন, তাই তাঁরা ওদের কথায় কান না দিয়ে নিজের যা কর্তব্য ঠিক করে যান। … সময়ে সব কিছু হয়, ব্যস্ত হলে চলরে না; কোন প্রতিকূল অবস্থায় পড়লে ধৈর্য ধরে থাকতে হয়।”
“বদ্ধ মানুষ মনে করে যে, এখন যেমন আছে, চিরকালই তেমন থাকবে। কিন্তু মৃত্যু যে ঘাড়ে চেপে আছে, ‘কাল’ হাঁ করে আছে, বুঝতে পারে না ।…… চিরদিনই মুক্ত আর বদ্ধ এ দু’রকম (মনুষ্য)-ই জগতে থাকবে।”
“জীবশক্তি ক্ষুদ্রশক্তি, নিজ কল্যাণসাধনেই অসমর্থ, আর অবতার শক্তি দৈবীশক্তি, সমগ্র জগতের কল্যাণসাধনে সমর্থ। বক্তৃতার অপেক্ষা বেশি কাজ হয় সগ্রন্থ পাঠ। (এতে) সাধু-সঙ্গের ফল হয়।”