ডঃ লুৎফার রহমান সরকার ১৯৩০ সালে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি এক দিকে ছিলেন যেমন বাংলাদেশী ইসলামিক ব্যাংকের গভর্নর, তেমনি অপরদিকে ছিলেন তিনি একজন অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এনার মৃত্যু ২০১৩ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের ঢাকায় হয়। এনার কিছু মোটিভেশনাল বাণী নিচে উল্লেখ করা হল।-
“কবিতা ভারী দুষ্ট ও অভিমানী মেয়ে। ধনীর ঘরে সাধারণত জন্মায় না। অলিগলি বস্তি এলাকায় খুঁজলে হয়তো বা তার সন্ধান মিললেও মিলতে পারে। ভালোবাসার প্রচণ্ডতা না থাকলে কি কেউ কাউকে কোনোদিন খুঁজে পায়?”
“তুমি যে কাজই করো না লজ্জা নেই। লজ্জা হয় অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করায়। ভিক্ষা করায় কিংবা মূর্খ হয়ে থাকায়। জ্ঞান লাভ কর, নিজের ভিতরে যে শক্তি আছে তাই জাগাইয়া তোলো, তুমি ছোট হয়ে পড়ে থাকবে না।”
“গোলাপকে যে নামেই ডাকা যায় তার খুশবু একই থাকে।”
“মানুষের মূল্য কোথায়? চরিত্র, মনুষ্যত্ব, জ্ঞান ও কর্মে? বস্তুতঃ চরিত্র বললেই মানুষের জীবনের যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা বুঝতে হবে। চরিত্র ছাড়া মানুষকে গৌরব করার কিছুই নেই। মানুষের শ্রদ্ধা যদি মানুষের প্রাপ্য হয়, মানুষ যদি মানুষকে শ্রদ্ধা করে সে শুধু চরিত্রের জন্য, অন্য কোনো কারণে মানুষের মাথা মানুষের সামনে নত হবার দরকার নেই।”
“চাঁদকে কে না ভালোবাসে। চাঁদকে কেন্দ্র করেই তো রচিত হয়েছে কত ছবি, কত গান, কত কবিতা, কত সাহিত্য। কত প্রেমিক-প্রেমিকা এই চাঁদকে সাক্ষী রেখেই কত সুখের ঘর রচনার স্বপ্ন দেখে তার ইয়ত্তা নেই।”
“গুণ থাকলেও চেষ্টা না করলে জগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করা যায় না।”
“নিজেকে এবং জাতিকে বড় করতে হলে তোমাদের সমস্ত শক্তির পূর্ণ ব্যবহার চাই। তোমার নিজের বড় হওয়ার উপরেই জাতির বড় হওয়া নির্ভর করে। তুমি ছাড়া জাতি স্বতন্ত্র নয়। সকলে নিজেকে টেনে তোল জাতিও বড় হবে।”
“অজ্ঞতার ন্যায় মহাশত্রু মানব-জীবনের আর নেই। জীবনের যে অবস্থাতেই থাকো না, তোমাকে জ্ঞানের সঙ্গে যোগ রাখতে হবে। জ্ঞানের চরম সার্থকতা মানুষকে ভালো-মন্দ বলে দেওয়া—তার আত্মার দৃষ্টি খুলে দেওয়া, তার জীবনের কলঙ্ক কালিমাগুলি ধুয়ে ফেলা।”
“যে নারী স্বামীর সাধন পথের সহায়ক না হয়ে অন্তরায় হয়েছে, তিনি তার নারীর জীবনকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন।”
“দূর থেকে মনে হয় সব সংসারেই স্বামী-স্ত্রী কতই না সুখী। কিন্তু কাছে গেলে দেখা যায় দু’জন যাত্রী কিন্তু চলেছে ভিন্ন দুটি ঠিকানায়।”
“মানুষ ইচ্ছা করে ছোট ও দরিদ্র হয়। তার ছোট ও দরিদ্র হবার কোনো কথাই নাই। তবু শুধু সহিষ্ণু পরিশ্রম চাই। জয়ের জন্য শুধু আল্লাহর দিকে চেয়ে থেকো না। তোমার বাহুতে যে শক্তি আছে, তোমার মাথায় যে বুদ্ধি আছে, তার ব্যবহার তুমি কর ৷”
“মানুষকে দান কর, কিন্তু দান করার জন্যই কি দান করতে পারে? দেখতে হবে প্রদত্ত পয়সায় দানপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রকৃত উপকার হবে কিনা। যার আছে তাকে আরো দিলে পয়সার অপব্যবহার হয় না কি?”
“চিত্তকে মিথ্যার বিরুদ্ধে স্বাধীন করে রাখার নামই ধর্ম।”
“মূর্খ ও জ্ঞানহীন মানুষের ধার্মিক হইবার অধিকার নাই। সে ধার্মিক হইতে পারে না।”
“এ জগতে তুমি মানুষকে যা কিছু দাও না, জ্ঞান দান অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দান আর নেই। পণ্ডিতকে পথ দেখানো, জ্ঞানান্ধকে জ্ঞান দান করাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।”
“নারী হলো অনবদ্য শিল্প সৃষ্টির প্রধান অনুপ্রেরণা। যুবতীর দেহের ভাঁজে ভাঁজে শত শত কবিতা লুকিয়ে থাকে।”
“এককালে মেয়েরা ছিল সংসার-বৈতরণীর পাকা মাঝি। কিন্তু আজকাল তারা সংসার চালানোর চাইতে গাড়ি চালানোতেই বেশি উৎসাহী। রান্না করার চাইতে বাজার করাতেই তাদের আনন্দ বেশি। আর শক্তিধর বউয়ের দাপটে আতঙ্কগ্রস্ত স্বামীরা বিড়ালের মতো পিট্পিট্ করে তাকিয়ে তা দেখে। কিন্তু কিছু বলার সাহস পায় না। কারণ বিয়ে নামক ঘটনাটি স্ত্রীকে শুধু গাড়ি চালানোর লাইসেন্সই দেয় না, স্বামীকে চালানোরও অবাধ অধিকার দেয়। এইজন্যেই বোধহয় মেয়েরা কাঁদে বিয়ের আগে, ছেলেরা কাঁদে বিয়ের পরে।”
“মেয়েমানুষ বোঝার জন্য নয়—ভালোবাসার জন্য। তারা হলো মর্ডান আর্টের মতো, যা বোঝা যায় না বলে সবাই ভালোবাসে বেশি।”
“বাঙালি যুবকদের অভিযোগ নারীকে তারা পায় শুধু বউ হিসাবে, বন্ধু হিসেবে নয়। সহকমিণি বা সহধমিণি হিসেবে তো নয়ই, অর্ধাঙ্গিণী তো অনেক দূরের কথা।”
“নারী হেসে ওঠার আগে নাকি পৃথিবী বিষণ্ণ ছিল, ফুলের বাগান ছিল জঙ্গলময়, পুরুষ ছিল জটাধারী সন্ন্যাসী। পৃথিবী আজ আলোয়-আলোয় ঝলমল করছে। এত হাসি, এত গান, এত ছবি, এত কল্পনা আগে কখনো ছিল না। এ শুধু নারীর হাসির গুণে। পুরুষের তাই আন্তরিক কামনা নারীর মুখে সেই হাসি যেন সারাক্ষণ লেগে থাকে। চিরদিন ঝল্মল্ করে। নারীরা হোক চিরযৌবনা, চির সুঠাম তন্বী, কেননা, যৌবনই হলো হাসি আনন্দের আদি স্রষ্টা।”
“যে অর্থ মানব কল্যাণে ব্যয়িত হয় না, যে ক্ষমতা মানুষের দাবী রক্ষার জন্যে অর্পিত হয় না, যে বিদ্যা মানুষের সত্য ও ন্যায় মহিমা শোনাবার জন্যে লাভহয়নি, সে অর্থ সে ক্ষমতা ও বিদ্যার কোনো মূল্য নেই।”
“শরীরের পরিশ্রম অপেক্ষা মাথার পরিশ্রমের মূল্য বেশী।”
“আজকাল পোশাক-আশাকে ছেলেরা মেয়ে সাজতে পারলে এবং মেয়েরা ছেলে সাজতে পারলে আনন্দে আটখানা হয়ে যায়। এইসব মেয়েমার্কা ছেলে এবং ছেলেমার্কা মেয়ে সমাজে মাঝে মাঝে অল্পবিস্তর আনন্দরসের সৃষ্টি করতে চেষ্টা চালাচ্ছে বটে কিন্তু বুড়োদের চোখ রাঙানিতে তাদের জ্ঞানের পেরেশানই কেবল বাড়ছে।”
“বাড়িতে আগুন লাগে উনুন থেকে, পাশাপাশি বাড়ির মধ্যে রেষারেষি শুরু হয় কাজের লোকের বাজে কথা থেকে।”
“প্রতিবেশী না খেয়ে থাকলে অবশ্য বলার কিছু নেই, কিন্তু খেয়ে থাকলেই আমাদের যত কৌতূহল।”
“প্রাক্বিবাহ কাল হলো প্রেমের সীজন। এই সীজনেই কবিতার ফুল ফোটে বেশি। কিন্তু এইসব বয়সের প্রেম যেমন বেশিদিন টেকে না, কবিতার ব্যারামটাও তেমনি বেশিদিন স্থায়ী হয় না !”
“প্রেম মানুষকে সংযমী চরিত্রবান, বলবান, সাবধান, দৃঢ়বান করে—যুবককে সংগ্রামশীল, মহৎ ও গৌরবশীল করে।”
“অসমান মিত্রতা বড় খারাপ, ছোট বড় প্রেম একেবারেই আপত্তিজনক।”
“এ বাড়ির জানালা খুললে যদি ও বাড়ির জানালা দেখা যায় এবং তার সাথে যদি দেখা যায় দু’ধারে দুটি সোনালী বয়সের সোনামুখ, একটি ছেলের অন্যটি মেয়ের তাহলে যে হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার শুরু হয়, তাকে হৃদয়বান ব্যক্তিরা প্রেম বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।”
“প্রিয়জনের প্রেম আর ভক্তের ভালোবাসা- –এ দুই এক নাও হতে পারে।”
“কাণ্ডজ্ঞান টনটনে থাকলে ভালোবাসা যায় না।”
“নারী স্বামীর কাছে হবে একখানা মূর্তিময়ী কবিতা, সেখানে জ্ঞান ও আনন্দ দুই-ই পাওয়া যায়।”
“আদিকাল থেকেই চলেছে দাম্পত্যজীবনের নামে নর ও নারীর যুদ্ধ। অতিশয় পতিব্রতা রমণীকেও তাই লাঠিখেলায় না হোক, কমপক্ষে ঝাঁটাখেলায় পারদর্শিনী হতে দেখা যায়।”
“ভালোবাসা মানুষকে অর্ধ উন্মাদ করে, বিয়ে সেই উন্মত্ততাকে পূর্ণতা দান করে।”
“ফুল বাগানেই সুন্দর। ফুল তুলে মালা গাঁথলে তার সৌন্দর্যই শুধু ক্ষুণ্ণ হয় না, তার সৌরভও নষ্ট হয়। ভালোবাসা যদি কারো একান্তই কাম্য হয়, তাহলে তার বিয়ে করা উচিত নয়। কারণ বিয়ে হলো ভালোবাসার সমাধি।”
“বন্ধুকে বন্ধুভাবেই মনে করবে, তাকে বিশ্বাস করবে, আর কোনো বিচার করবে না। জগতে প্রকৃত বন্ধু একান্ত দুর্লভ।”
“বিদ্রোহী হইলে মানুষ বিরক্ত হয়—বিরুদ্ধে কথা শুনিলে উগ্র হওয়া মানুষের স্বভাব, ইহা সত্য, কিন্তু বিদ্রোহ ও সমালোচনা ব্যতীত মানব সমাজ বা জগতের কোনো কল্যাণ হয় না ।”
“টিকিট না কিনে রেল ভ্রমণ করতে যদি সক্ষম হয়ে থাক, তবে নিজেকে খুব হীনই মনে করো। গার্ড সাহেব তোমাকে দেখে নাই, বিবেক তোমার ভিতরে বসে তোমার নীচতা দেখে অবাক হয়েছে।”
“বিয়ে না করে জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ানোর মধ্যে আর যাই থাক, কোনো পৌরুষ নেই ।”
“বিয়ে মানেই খরচের হিসেব খোলা।”
“তাদের (স্ত্রীদের) অভিযোগ বিয়ের আগে ছেলেরা বলে আকাশ থেকে চাঁদ এনে দেবো। কিন্তু বিয়ের পরে বাজার থেকে একটা মুরগী কেনার মুরোদ থাকে না।”
“মানুষের সঙ্গে নিষ্ঠুর ব্যবহার করে যে খোদার সঙ্গে প্রেম করতে যায়, তার বুদ্ধি খুব কম, অন্যায় ও পাপে জীবনকে কলঙ্কিত করো কোনো ক্ষতি নেই, আল্লাহকে ডাকলেই সকল পাপ ধুয়ে যাবে—এটা যে মিথ্যা কথা একথা সকলেই বিশ্বাস করো।”
“পরের জন্য ত্যাগ স্বীকার, নিজের সুখের সঙ্গে সঙ্গে পরের সুখের প্রতি দৃষ্টি রাখা, পরকে আঘাত না দেওয়া, অর্থ দিয়ে হোক বা পরিশ্রম করে হোক, অন্যকে সাহায্য করার নাম ভদ্রতা।”
“মনুষ্যত্বকে যারা শ্রদ্ধা করতে শেখে নাই, তাদের স্বাধীনতা পাবার কোনো অধিকার নাই। মনুষ্যত্ব মানবজীবনের উচ্চাঙ্গের ভদ্রতা ছাড়া আর কিছু নয়।”
“মানুষের প্রতি প্রেম, দেশের আত্মপীড়িতের প্রতি মায়া, অত্যাচারিত পিষ্ট মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা যার নাই, তিনি ভদ্রলোক নন।”
“যে বড় যুদ্ধে জয়লাভ করে, তার মনুষ্যত্ব সূচিত হয় না। প্রতিদিনের ছোট ছোট কথা, ছোট ছোট ব্যবহার, হাসি রহস্য, একটুখানি সহায়তা, একটা স্নেহের বাক্যেমনুষ্যত্ব সূচিত হয়।”
“বিপন্ন ব্যক্তি পরিচিত হউক আর অপরিচিত হউক, তাকে আপন বলে বুকে টেনে নিতে হবে। মানুষ মাত্রেই মানুষের আত্মীয়-এ যে মনে করতে পারে তার ধর্ম বিশ্বাসের মূল্য খুব বেশি।”
“অভাবগ্রস্ত যে, তার চিত্তে স্বাধীনতা থাকে না। তুমি মিতব্যয়ী হও, তোমার মনে স্বাধীনতা বেড়ে যাবে।”
“মানুষ যদি হিসেবী হত তা হলে জগতের পনেরো আনা দুঃখ কমে যেত। জগতে এত দরিদ্র লোক থাকতো না— মানুষের এত হাহাকার শোনা যেত না। রূপ মানুষকে অভিভূত করে ফেলে সত্য কিন্তু রূপের পাশে যদি গুণ না থাকে, নারীর রূপ যদি পুরুষের মনকে অধঃপতিত করে, তার রুচি ও মনুষ্যত্বকে খর্ব করে দেয়, তবে সে রূপকে বাদ দিতে হবে।”
“মফঃস্বলে এসে মহাকালও থেমে গেছে। সেখানে মানুষ বদলায় না। মানুষের অবস্থাও বদলায় না। পরিবর্তন তো শুধু শহরের লোকদের জন্যে।”
“আমাদের দেশের মেয়েরা পড়ে বিয়ের জন্য, ছেলেরা পড়ে চাকরির জন্য। বিয়ে হলে মেয়েরা যেমন তার পড়ার প্রয়োজন মনে করে না, চাকরি পেলে তেমনি ছেলেরা বইয়ের ধার কাছ দিয়েও যায় না।”
“কেবল বহুসংখ্যক লোককে অক্ষরজ্ঞান বিশিষ্ট করলেই তাদের মানুষ করা হল না। মানুষের মধ্যে পাশবস্বভাব আছে এবং ঐশ্বরিকগুণও আছে। পাশবিক স্বভাব দমন করে যদি তার ঐশ্বরিক গুণকে ফুটিয়ে তোলা যায়, তবেই তাকে প্রকৃত মানুষ করা হল। শিক্ষকের কাজ এই লেজ-শিংবিহীন পশুকে মানুষ করা।”
“কলেজ তোমাকে শুধু পথ দেখিয়ে দেয়। সারা জীবন তোমায় দেখতে হবে, শিখতে হবে, জ্ঞানার্জন করতে হবে।”
“হাজার ভক্তের ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকে শিল্পী।”
“ছেলের কৃতিত্বে বাপের বুক যে কতখানি ফুলে ওঠে বাপ হওয়ার আগে তা কেউ বুঝতে পারে না।”
“দেশের জনগণ আজকাল শস্য ও সন্তান উৎপাদনে ব্যস্ত। জমির উর্বরতা কম বলে কখনো কখনো শস্যসঙকট দেখা দিলেও সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনোদিন ঘাটতি পড়েছে এমন বদনাম আমাদের বড় শত্রুও দিতে পারবে না। শস্য উৎপাদন না হোক, অন্তত সন্তান উৎপাদনে আমরা পৃথিবীর যে কোনো দেশকে হার মানিয়েছি, এ কথা আজ আমরা জোর গলায় বলতে পারি। আমাদের দাম্পত্য জীবনের একমাত্র লক্ষ্য মনে হয় এই সন্তান উৎপাদন তা যত দ্রুত এবং যত অধিক হারে সম্ভব।”
“অর্থ সঞ্চয় করা আর সময়ের সদ্ব্যবহার করা একই কথা।”
“সংগ্রাম করবে আর জেলের ভাত খাব না। এ-ও কি হয়।”
“দরজা খুলে শোওয়াটা সাহসের নিদর্শন, কিন্তু একই সঙ্গে নির্বুদ্ধিতারও পরিচায়ক।”
“সাহিত্যের কাজ মানুষকে তার চারদিককার মন্দশক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তোলা, তার মধ্যে সমাজ, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাহ্য করে ন্যায়, সত্যকে মেনে নেবার প্রবৃত্তি সৃষ্টি করে দেওয়া।”
“মানবসেবার ন্যায় ধর্ম নাই।”
“মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সার্থকতা সৈনিক-জীবনে। সৈনিক যে পথ দিয়া হাঁটেন, সে পথের ধূলাগুলিও পবিত্র — সৈনিক সামান্য নহেন পাপকে দলন করিবার জন্য যে মানুষ অসাধারণ করেন তিনি অসামান্য।”
“আসলে সুখ হলো একটি সোনার হরিণ। যার বাস বনে নয়, মনে, মনের মতো মন থাকলে যে-কোনো অবস্থাতেই সুখী হওয়া যায়। প্রাণ খুলে হাসা যায়। সুখ বলে পৃথক কোনো বস্তু নেই। ওটাকে মনে সৃষ্টি করতে হয়। মনের মাঠে যারা সুখের ফসল ফলাতে পারে, তারাই শুধু সুখী হয়, তারাই শুধু প্রাণখুলে হাসতে পারে।”
“প্রকৃত সুখ কোথায় ? পরকে ফাঁকি দিয়ে নিজের সুখটুকু ভাগ করে নেওয়াতে কি সত্যিকারের সুখ আছে? আত্মার সাত্ত্বিক তৃপ্তির কাছে জড় দেহের ভোগ সুখের মূল্য কিছুই না যতদিন না মানুষ পরকে সুখ দিতে আনন্দ বোধ করবে ততদিন তার যথার্থ কল্যাণ নেই।”
“মানুষ যখনই বোঝে রূপের মধ্যে প্রেম, সহানুভূতি ও সুরুচির পরশ নেই, তখন সে সরে পড়ে। ক্ষণিক আমোদের জন্যে মানুষ সে রূপ তুলে নেয় না।”
“যারা কাপুরুষ তারাই ভাগ্যের দিকে চেয়ে থাকে। পুরুষ চায় নিজের শক্তির দিকে। তোমার বাহু, তোমার মাথা তোমাকে টেনে তুলবে, তোমার কপাল নয়।”
“সাধনার কোনো কোনো ব্যাপারে যদি প্রথমবারে ব্যর্থমনোরথ হও, পরাঙমুখ হয়ো না— বারে বারে আঘাত করো, দুয়ার ভেঙে যাবে। তাড়াতাড়ি না করে ধীরে ধীরে অগ্রসর হও। ধরে থাক, ক্রমশ তোমার শক্তি ও সুবিধা বাড়তে থাকবে। গিরিশিখর হতে যখন পাহাড়খণ্ড নাবতে থাকে, তখন তাকে প্রথমটা দেখে মনে হয় এই নগণ্য পাহাড়ের টুকরাটা কিছু নয়। ক্রমে যখন সে নীচে নেমে আসে, তখন তার শক্তি হয় কত ভয়ানক। সম্মুখে যা কিছু পায়, ভেঙে চূর্ণ করে নিয়ে যায়।”