শ্রীমৎ সত্যদেব ১৮৮৩ সালে ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একজন অদৈতবাদী শাক্তাচার্য ছিলেন। ইনি ঈশ্বর উপলব্ধির জন্য ধ্যান ও ব্রত করতেন। এবং মানুষকে কিভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত করা যায় তার জন্য প্রদেশ প্রদান করবেন অবশেষে ইনি ১৯৩২ সালে মারা যান। এনার কিছু উপদেশ নীচে উল্লেখ করা হলো।
“যখন এক অদ্বিতীয় পরমাত্মা নির্বিশেষ চৈতন্য নিজেতেই বহুভাব দর্শন করেন, এই দর্শনে তাঁর তখনই তিনি (মহা) মায়া আখ্যায় অভিহিত হয়ে থাকেন। কোনো রূপ প্রয়াস প্রয়োজন হয় না, লীলাকৈবল্যবশতঃ এটি নিঃশ্বাসের মতোই স্বাভাবিক।”
“যা কিছু দেখছো, শুনছো, বলছো, ভাবছো সবই ঈশ্বর, যা ছাড়া কোথাও কিছু গুরুকৃপায় তৃতীয় নেত্র উন্মীলন হলেই তাঁকে দেখা যায়।…..তিনিই মা, তিনিই ব্ৰহ্ম।”
“শুচি-অশুচি, ভালো-মন্দ, সবই একমাত্র মহাসত্যে প্রতিষ্ঠিত।”
“এই জগৎ প্রবাহরূপে সত্য। জগৎজ্ঞান যতক্ষণ আছে ততক্ষণ তাকে অস্বীকার করবার পথ নেই। কিন্তু (অখণ্ড) আত্মজ্ঞানভূমিতে জগৎ-প্রতীতি থাকে না, দ্রষ্টা ও দৃশ্যভেদ থাকে না।”
“মায়ামুক্ত নির্বিশেষ চৈতন্য স্বরূপ পরব্রহ্ম বাক্য ও মনের অতীত, সুতরাং তিনি সাধ্য, নন। বরং মায়াই স্নেহময়ী জননীর মতো জীবরূপ সন্তানকে ধারণ করে অসংখ্য জন্ম-মৃত্যু প্রবাহের মধ্য দিয়ে জ্ঞান-স্তন্য পান করাতে করাতে পরব্রহ্মে মিলিত করে থাকেন। মায়া যখন নির্বিশেষ চৈতন্য স্বরূপে উপনীত হন তখন তিনিই পরব্রহ্ম আখ্যায় অভিহিত হয়ে থাকেন ।”
“এই পরিদৃশ্যমান বিশ্ব যে মায়েরই স্বেচ্ছাকৃত লীলাবিলাস, এটি বুদ্ধি দ্বারা ধারণা করতে চেষ্টা করো।”
“কর্মানুষ্ঠানে জীবের কোনো কর্তৃত্বই নেই………আমি আমার মঙ্গলময়ী জননীর হস্তস্থিত ক্রীড়া পুতুল মাত্র’–এই জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে আর সংসার, সুলভ দুঃখ- শোকে বিন্দুমাত্র বিচলিত হতে হয় না। এটি অলসের ‘অদৃষ্টবাদ’ নয়। এইরূপ জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির কর্মস্রোত সহস্রগুণ বেড়ে যায়।”
“বাস্তবিক জড় বলে কিছু নেই। চৈতন্যের আত্মহারা অবস্থার নাম জড়। …সৃষ্টি ও লয় রূপে যা পরিলক্ষিত হয় তা স্বপ্নদর্শনের মতো আত্মারই স্বেচ্ছাকৃত একপ্রকার দর্শনমাত্র।”
“মনের একদিকে দেবভাবের কর্তৃত্ব, অন্যদিকে অসুরভাবের অত্যাচার, এইরূপ উৎপীড়িত হয়েই জীব মায়ের শরণাপন্ন হতে চায়। জীব যতদিন ‘আমিত্ব’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে, যতদিন অভিমানের উচ্চশির কিছুতেই অবনত করতে চায় না ততদিন শরণাগতি কিছুতেই আসে না । …আত্মনিবেদন ব্যতীত সাধনা আরম্ভই হয় না। সকল মহাপুরুষ, সকল শাস্ত্র এই আত্মনিবেদনকেই সাধনার ভিত্তি এবং আত্মনিবেদনেই সাধনার অবসান বলে ঘোষণা করেছেন।…আত্মনিবেদন অর্থাৎ শরণাগত ভাবই সর্ববিধ সাধনার একমাত্র উদ্দেশ্য। ….. আদর্শ গৃহী-হও, দেশের অনেক কল্যাণ সাধিত হবে।”
“সাধনা রাজ্যে কল্পনা বা অনুষ্ঠানের স্থান নেই। অ-প্রত্যক্ষের উদ্দেশ্যে সাধনা হয় না।….তাঁকে পাওয়া মানে, তাঁরই হয়ে যাওয়া।”
“বিন্দুমাত্রও যেন ‘অহং’ ভাব না জাগে। তোমার দেহটা যন্ত্রময়। ওটিকে আশ্রয় জান করে শ্রীগুরুর শক্তি প্রকাশ পাচ্ছে। শক্তি সমর্পণ বড় সুন্দর সাধনা। তোমার প্রত্যেক ইন্দ্রিয় পথে যে সকল শক্তি প্রকাশ পায়; ওইগুলি তোমার হৃদয়দেশস্থ প্রাণকেন্দ্র অর্থাৎ প্রাণময়ী ‘মা’ বা গুরুরূপ কেন্দ্র থেকেই প্রকাশিত, এই ভাবটা যতটা সম্ভব স্মরণ করতে চেষ্টা করবে, তাহলেই শক্তি সমর্পণ রহস্য অবগত হতে পারবে।”
“সত্য স্বরূপিনী মা-ই কখনো ভোগের আকারে কখনো বা ত্যাগের আকারে আসেন ৷”