Motivation quotes by paramhansa jagananda | পরমহংস যোগানন্দের ২৩টি মোটিভেশন বাণী

শ্রীমৎ পরমহংস যোগানন্দ ১৮৯৩ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের গোরখপুর অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশবকালে এনার নাম রাখা হয়েছিল মুকুন্দলাল ঘোষ। এরপর ১৯১৫ সালে নাটক ডিগ্রী অর্জন করার পর সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করেন। তিনি হিন্দু ধর্ম প্রচারে আমেরিকা পর্যন্ত যাত্রা করেছিলেন। ইনি একদিকে ছিলেন যেমন সন্ন্যাসী ও সদ্ গুরু তেমনি অপরদিকে ছিলেন একজন যোগী। অবশেষে ১৯৫২ সালের মার্চ মাসে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় শেষ জীবন ত্যাগ করেন।

Motivation quotes by paramhansa jagananda
Photo by pexels.com

“যদি আনন্দময় শাশ্বত মুক্ত জীবনে স্থিত হতে চাও, তবে অপরিমিত চাহিদার অভাব সৃষ্টি করে মিথ্যা সুখের মোহে বিষয় বাসনার পেছনে ছোটার চেষ্টা করো না। —আত্মজ্ঞানী উপমারহিত ‘সুখ’ প্রাপ্ত হন, যা বিষয়-নিরপেক্ষ “আত্মানন্দ”। জীব ব্রহ্মস্বরূপ। যেমন অগ্নি ও তার স্ফুলিঙ্গ কিংবা সমুদ্র ও তার তরঙ্গ। কেবল সাময়িক (মায়িক) ব্যবধানে জীবেদের স্বতন্ত্র্য বলে মনে হয়। প্রকৃতপক্ষে জীবের স্বরূপ স্থান তো ব্ৰহ্মচৈতন্য, বিশুদ্ধ আত্মজ্ঞানের প্রভাবে ‘মায়া’কে অতিক্রম করতে পারলেই জীব নিজ স্বরূপ ব্রহ্মপদ লাভ করে। কিন্তু আত্মজ্ঞানে জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত জীব কর্মফল ভোগ করতে বারংবার জন্মগ্রহণ করে।”

“যে কর্ম নিয়ে মানুষ জন্মায় সেই সহজাত কৰ্মকে ‘সহজ’ কর্ম বলে। একজন ক্রিয়াযোগীর ক্ষেত্রে, পূর্বজন্মে ‘ক্রিয়া’ অভ্যাসে তার যে আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটেছে, তদনুযায়ীই ইহজন্মে ‘সহজকর্মে’র বিকাশ হয়। ….জোর করে প্রাণবায়ুকে ঊর্ধমুখী করার চেষ্টা করলে দৈহিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে খুবই। ‘ক্রিয়াযোগে’র মতো উচ্চাঙ্গের যোগবিদ্যা শিখতে হলে সদ্গুরুর কাছেই শেখা উচিত। শুধু শাস্ত্র পড়ে অভ্যাস করতে গেলে বিপদ হতে পারে।”

“অসীম অনন্ত ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের লীলাখেলার প্রগাঢ় সম্পর্ক। —তিনি যেন আমাদের দর্শন দেওয়ার আগে অপেক্ষা করে দেখেন, আমরা তাঁকে পাওয়ার জন্য একান্ত আগ্রহ পোষণ করছি কিনা। …..ঈশ্বর সর্বকালের সকলের প্রেমদাতা। তিনিযেন প্রেমের ভিখারী হয়ে লীলা করছেন। ….প্রেমই একমাত্র বস্তু যা ঈশ্বরকে নিবেদন করতে পারা যায়, আর অন্য কিছুই তাকে দেবার নেই। …ধ্যানযোগে ঈশ্বরের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করো।”

“চিত্ত স্থির করে আত্মনিবিষ্ট হওয়ার একটি উপায় ধ্যান। ধ্যান মানুষকে এই উপলব্ধির দিকে নিয়ে যায় যে, মানুষ মরদেহ মাত্র নয়, সে স্বরূপতঃ অমর আত্মা।”

“চারপাশে যা কিছু আছে, তার কোনোটি তোমার মনের মত, কোনোটি মনের মত নয়। তোমার পছন্দ-অপছন্দের মধ্যেই রয়েছে বিরুদ্ধ মনোভাব। এজন্য তোমার অন্তরেই লুকিয়ে আছে তোমার (দ্বন্দ্বময়) শত্রু। এই ‘শত্রু” ভাবটিকে জয় করতে আজ থেকেই চেষ্টিত হও। বিরুদ্ধভাব দূর করো এবং কেবল যুক্তিসঙ্গত ভাবে যা কর্তব্য তাই স্বচ্ছন্দে করে যাও। – –অজ্ঞতা থেকেই সংশয় আসে। সংশয়ই সকল অনর্থের মূল। নিজের সংশয় নিজে বুঝে ত্যাগ না করলে অন্য কেউ তা ত্যাগ করাতে পারে না।”

“বিভিন্ন প্রকার ইতর প্রজাতিতে আশি লক্ষবার জন্মগ্রহণের পর তবেই জীবের দুর্লভ মনুষ্য জন্ম লাভ হয়। ……উদ্ভিদ থেকে শুরু করে পশুপক্ষী ইত্যাদি প্রজাতিতে জন্মগ্রহণ করে জীব ক্রমশঃ উন্নত জীবন লাভ করে অবশেষে মনুষ্যদেহ পায়। এইভাবে ক্রমবিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন মানুষ জন্মাচ্ছে। একমাত্র মানুষের মধ্যেই জাগে সেই শক্তি যার মাধ্যমে সে নিজের দিব্যস্বরূপকে প্রকাশিত করতে পারে নিজের মধ্যেই।”

“পারিপার্শ্বিকের প্রভাব মানুষকে সর্বদাই কম-বেশী জড়িত রাখে, তাই সাধারণভাবে মানুষ কখনো নিগূঢ় সত্যের কথা চিন্তা করার সুযোগ পায় না। … যারা সত্যিই নিজেদের কল্যাণ চায়, তাদের উচিত পরিবেশে সংযত স্বভাব ও ধীর স্থির লোকের সঙ্গেই অধিক মেলামেশা করা। …. প্রধানতঃ সৎ-সঙ্গগুণেই মানুষ সৎ মনোভাবাপন্ন হয়। দুর্জনের সংসর্গ মানুষকে নিম্নগামী করে। —দুশ্চরিত্র লোকও সৎ-সঙ্গ করে জীবন যাপন করলে তার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। বস্তুতঃ অল্পবয়স থেকে সংসর্গগুণেই মানুষের অন্তঃকরণের ধরন গঠিত হয়। মানসিক ভাবধারা ও তার অনুশীলনই মানবজীবনের সমস্ত কর্মধারা নিয়ন্ত্রিত করে।”

“কোনো সাধনাতেই ভক্তি ছাড়া ভগবানকে পাওয়া যায় না। তিনি অতি দূরে অথচ অত্যন্ত নিকটে আছেন।”

Motivation quotes by paramhansa jagananda

“ঈশ্বরের অন্বেষণ করা যে জীবনের উদ্দেশ্য, এই বিষয়ে অনেকের সংশয় থাকতে পারে। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য যে সুখের সন্ধান, একথা সকলেই বোঝে। বস্তুতঃ ঈশ্বরই পরম সুখের উৎস, আনন্দস্বরূপ, তিনি প্রেমময়। আত্মানন্দ রূপে তিনি সকলের মধ্যেই স্বরূপে বর্তমান। সুতরাং সেই শাশ্বত আনন্দকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করো। অন্য কেউ তা পাইয়ে দিতে পারে না। এই আনন্দবোধ জাগরণের জন্যই অবিরত সাধনা করতে হয় প্রত্যেককে নিজেই। ….ভগবৎপ্রেমের পবিত্র আনন্দের শেষ নেই। তুলনাহীন এই আনন্দানুভূতি ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং পরিণতিতে যোগযুক্তগণ পরমাত্মা সচ্চিদানন্দে নিমগ্ন হয়ে একাত্ম হয়ে যান। দেহত্যাগের পর তাদের জন্মগ্রহণ করতে হয় না।”

“যা স্থান ও কালের দ্বারা সীমাবদ্ধ তা-ই ‘অসৎ’ অর্থাৎ যা এক জায়গায় আছে কিন্তু অন্য জায়গায় নেই, তা স্থানের সীমানার অধীন; এবং যা আগে ছিল না, পরে থাকবে না, কিন্তু এখন আছে তা কালের সীমাধীন, সুতরাং সেটি ‘অসৎ’। (আপেক্ষিক বিচারে) যেমন সমুদ্রের জল ‘সৎ’ কিন্তু তার তরঙ্গ হলো এক ক্ষণস্থায়ী বিকাশমাত্র তাই ‘অসৎ’। বস্তুত সকল সৃষ্ট রূপই স্থান কালের দ্বারা সীমাবদ্ধ, সুতরাং তা অবিনশ্বর নয়। একমাত্র পরম আত্মাই ‘সৎ’। শুধু সেই পরমচৈতন্যই সর্বকালে সর্বস্থানে সমভাবে বিরাজমান। যে অবস্থা লাভ করলে সাধক আর অন্য কোনো লাভকে তার থেকে অধিক বলে মনে করেন না এবং যাতে স্থিত হলে জরা-ব্যাধি-মৃত্যু আদি দ্বারাও বিচলিত হন না, সেই দুঃখ সংস্রবহীন “চিত্তবৃত্তিনিরোধ” অবস্থার নামই ‘যোগ’। অধ্যবসায় সহকারে নির্বেদ চিত্তে এই যোগাভ্যাস করতে হয়।

….একেই ‘নির্বাণ’ বা ‘কৈবল্য’বলা হয়। ‘এই দেহে তিনিই আছেন, আর তিনিই সব কাজ করছেন’–এই ধারণা করে ভালো-মন্দ সমস্ত কাজ যদি তাঁকে সমর্পণ করতে পারো, তাহলে বিস্মিত চিত্তে দেখবে তোমার সকল কাজ ক্রমেই মঙ্গলময় রূপ পরিগ্রহ করে চলেছে। আধ্যাত্মিকতার প্রসার ছাড়া ব্যক্তিগত বা জাতিগত সুখ-শান্তি বিকশিত হতে পারে না । ‘আমার আমার’ বলে আজ যা নিয়ে ভাবছো তার কিছুই এ জগতে চিরদিন থাকবে না। সুতরাং প্রথমে একমাত্র তাঁকেই জানার চেষ্টা করো, যিনি তোমাকে মননের শক্তি দিয়েছেন, ভালোবাসা ও জ্ঞানলাভের প্রেরণা দিয়েছেন। তাঁর সান্নিধ্যবোধের সাধনা করো। তবেই তাঁকে ‘দর্শন’ করতে পারবে।”

“পরমাত্মাই সশক্তিক ভাবে ঈশ্বর পদবাচ্য। ঈশ্বর জীবজগতে সবার থেকে স্বতন্ত্র। যদিও তিনি স্রষ্টা ও সর্বভূতে বিরজিত থেকে সমস্তই আস্বাদন করেন, তবুও তিনি মায়ার বশীভূত নন। তিনি কর্ম বা সংস্কার থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত সত্তা। —তাঁর মায়াপ্রভাবে জীবসমূহ প্রবৃত্তির বশে বিভিন্নভাবে ভ্রমণ করে চলেছে। মানুষ যে নিবৃত্তির পথে যায় তাও মায়ার ব্যবস্থাতেই। মানুষ নিজেকে যতই ‘স্বাধীন’ মনে করুক তাঁকে চিরদিনই ঐশীশক্তি মহামায়ার অধীনেই থাকতে হবে।”

“যোগযুক্ত ব্যক্তির দেহে ইন্দ্রিয়গুলি নিজের নিজের কাজ যথারীতি করে যায়, কিন্তু তাতে ওই জীবমুক্ত যোগীর কোনো সংযোগ থাকে না। তিনি নির্লিপ্ত চেতনায় কেবল আত্মবোধই বিরাজ করেন। এমতাবস্থায় দেহগত ও বস্তুগত আসক্তি নিজে থেকেই ত্যাগ হয়ে যায়। একেই ‘যোগারূঢ়’ অবস্থা বলে।

…আত্মস্বরূপ গুণাতীত। তাই যিনি (আপন বোধে) সদাই এই বিশুদ্ধ আত্মজ্ঞানে অবস্থান করেন সেই মানুষকে ‘গুণাতীত’ বলা হয়। যিনি সর্বদা স্বরূপে স্থিত, সুখ-দুঃখ, প্রিয়-অপ্রিয়, নিন্দা-স্তুতি, মান-অপমান, শত্রু-মিত্র বলে যাঁর কোন ভেদবোধ নেই তাঁকেই ‘গুণাতীত’ বলা যায়; গুণ ও গুণের কার্য থেকে যিনি আলাদা বোধে উদাসীন স্ব-ভাবে থাকেন তাঁকে কোনো গুণ ও গুণের কার্য স্পর্শ করতে পারে না।”

” ‘যতকাল ‘আমি-ই কর্তা’ এই বোধ থাকে, ঈশ্বরে আত্মসমর্পণ না হয়, ততকাল ঈশ্বর লাভ হয় না।”

“শুভ চিন্তায় যিনি মগ্ন এবং সমস্ত প্রকৃতি রাজ্যে ও সবার মধ্যে যিনি মঙ্গল দেখতে পান, তার মনে কেবল কল্যাণপ্রদ বিষয়ই আলোকপাত করে। একদিন তিনি নিশ্চয়ই দেখতে পাবেন যে, মন, বুদ্ধি ও অনুভূতির যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাতায়ন পথে তিনি পরম শুভের আভাস মাত্র পেতেন, অদৃশ্য এক মহাশক্তি সেই বাতায়নগুলি ভেঙ্গে দিয়েছে এবং এক সীমাহীন ব্যাপ্তিতে তিনি সেই সর্বব্যাপী মঙ্গলময় ঈশ্বরের দর্শন লাভ করছেন।”

“সাধনার অভ্যাসে মনের চঞ্চলতা দূর হয়।”

Motivation quotes by paramhansa jagananda

“যার উৎপত্তি আছে, তারই আদি-অন্ত অছে। যা গুণবিশিষ্ট তারই রূপান্তর ঘটে। অনাদি ও নির্গুণ (শুদ্ধচৈতন্য) বলে পরমাত্মা বিকারহীন। তাই প্রতি জীবদেহে অনুস্যূত থেকেও তিনি কিছুতেই লিপ্ত হন না।”

“অভ্যাস একদিনেই পরিবর্তিত হতে পারে। —তুমি এক বিষয়ে মনোযোগী হয়েছ, এখন আর এক বিষয়ে মন নিবিষ্ট করো দেখবে অভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে গেছে।”

“ঈশ্বর লাভের জন্য বনে জঙ্গলে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই। দৈনন্দিন জীবনের কর্মময় বনভূমির মধ্যেই আমরা তাঁকে আমাদের অন্তরের নিভৃত গুহায় পেতে পারি।”

“তোমাকে অনুভব করতে হবে যে তুমি ঈশ্বরের সন্তান। -মন অন্তর্মুখীন হলে ভগবৎ আনন্দ উপলব্ধির সূচনা হয়। ইন্দ্রিয়াদি সম্ভূত সুখ স্থায়ী হয় না, কিন্তু ঈশ্বরানুভূতির আনন্দ চিরস্থায়ী।”

“কোনো বিষয়ে বিশেষভাবে চিন্তা-ভাবনা করলেই তা মনের মাঝে ‘সংস্কার’ হয়ে থেকে যায়। সেই “সংস্কার” স্মরণ-মনন ছাড়াই অতর্কিতে জীবনের ভালো বা মন্দ যে কোনো সময়ে নিজেই জেগে উঠতে পারে। সংস্কার বেশী মাত্রায় কার্যকরী হলে তার প্রভাবও বৃদ্ধি পায় এবং ক্রমেই তা অভ্যাসে পরিণত হয়। মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম বহুলাংশেই এই সংস্কারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তাই ভালো সংস্কারের অভ্যাস গড়ে তোলাই শুভপদ। (সু-চিন্তা- কেন্দ্রিক) সৎ-অভ্যাসই মানব চেতনাকে উন্নত করে যে মৃত্যুকাল পর্যন্ত মনে সদ্‌ভাব তথা ভগবদ্‌ভাব জাগায় ।”

“তোমার ইচ্ছাশক্তির মধ্যেই আছে ঈশ্বরের ঐশ্বর্য ও ক্ষমতা। যখন রাশি রাশি বিপদ দেখা দেয় এবং সমস্ত বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও তুমি পিছিয়ে যাও না, যখন মন থাকে অচঞ্চল অনুদ্বিগ্ন, তখনই বুঝবে ঈশ্বর তোমাকে সাড়া দিচ্ছেন।”

Leave a Reply