শ্রীমৎ যোগত্ৰয়ানন্দ ১৮৫৮ সালে ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একজন অদৈত্যবাদী যোগী ছিলেন। হিন্দু শাস্ত্র সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান ছিল। তিনি মনকে আত্মতুষ্টির জন্য কিছু উপদেশ ব্যক্তিদের কে দিতেন। ১৯৭৭ সালে ভারতে মারা যান। ইনার কয়েকটি বাণী নিচে উল্লেখ করা হল।-
“কায়িক, বাচিক ও মানসিক শুভকর্ম মাত্রই পূজা। বস্তুতঃ হৃদয়কে অনুরাগ বিদ্বেষাদি দোষরহিত করে, বাক্যকে মিথ্যামুক্ত করে, শরীরে হিংসা রহিত হয়ে হিতসাধক কর্ম করাই প্রকৃত ঈশ্বরপূজন। পূজা ও যোগ এক।”
“মহামায়ার কৃপা ব্যতিরেকে তাঁর স্বরূপ যথার্থভাবে অনুভব করা অসম্ভব।”
“অখণ্ড সচ্চিদানন্দময়ী, সর্বশক্তিময়ী মায়ের সঙ্গে সম্বন্ধটি না জানাই জীবের সর্বপ্রকার ক্লেশের হেতু।”
“সত্যানুসন্ধিৎসু ব্যক্তি কখনো কোনো বিষয়ে যথাযোগ্য বিচার না করে ত্যাগ বা গ্রহণ করে না। সে সকল বিষয়েরই সারটুকু গ্রহণ করতে চেষ্টা করে।”
“শ্রদ্ধা ভক্তি ও ভাবনা (মনন) এই তিনটি পূজার প্রাণ। ‘মা আমি তোমার’, এই প্রকার ভাবনাপূর্বক দৃঢ় শ্রদ্ধাসহ যে মায়ের চরণে আত্মসমর্পণ করতে পারে, ব্রহ্মস্বরূপিণী মহামায়া জগন্মাতার কৃপায় তার শক্তিহীনতা দূর হয়, সে সর্ববিষয়ে যথার্থ যোগ্যতা লাভ করে থাকে।”
“যে যা করে আত্মতুষ্টির জন্যই করে। মিথ্যা আত্মবোধের সংকীর্ণতাই জীবকে সহানুভূতিহীন করে, কৃপণ করে, নিষ্ঠুর করে। আবার আত্মবোধের প্রসার মানুষকে স্নেহ, প্রেম, সেবা প্রভৃতি সদ্গুণ দ্বারা ভূষিত করে।”
“স্থূলভাবের প্রকাশ সূক্ষ্মভাবে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু স্থূল কাৰ্য কখনো সূক্ষ্ম কারণ থেকে বিযুক্ত থাকে না, কারণ হতে কার্য বস্তুতঃ অভিন্ন। কারণের আত্মভূতা হলো শক্তি, এবং শক্তির আত্মভূত কার্য। কোনো বিষয়ে নিশ্চয়াত্মিক বোধ না হলে, সে বিষয়ে শ্রদ্ধা হতে পারে না। শ্রদ্ধাহীনের যজ্ঞানুষ্ঠান সফল হয় না।”
“সংসারের করণীয় কার্য যাতে যথার্থভাবে সম্পন্ন হয়, তার জন্য সদা সচেষ্ট থাকা প্রকৃত কল্যাণপ্রার্থীর অবশ্য কর্তব্য।”
“সর্বভাবকে আত্মভাবে দেখা, পরমাত্মারূপে অনুভব করাই অখণ্ড অবিকৃত স্ব-ভাবের দেখা।….আত্মবিদের নয়নে জগৎ আত্মময়। তিনি আত্মা থেকে ভিন্ন পদার্থ দেখতে পান না । …..আত্মা যখন প্রাণন ক্রিয়া সম্পাদন করেন তখন ‘প্রাণ’ নামে….. যখন মনন কার্য নিষ্পাদন করেন তখন ‘মন’ নামে অভিহিত হয়ে থাকে।”
“শুধু যুক্তি তর্কের দ্বারা সাধন পথে এগোনো যায় না।….. বর্হিমুখ বিক্ষিপ্ত চিত্ত ব্যক্তির পক্ষ্যেও দ্বৈতজ্ঞানের অনুশীলন ছাড়া অদ্বৈতজ্ঞান অগম্য।”
“যা বর্তমান, কিন্তু প্রকাশের পথ (অজ্ঞানে) আবৃত থাকায় অভিব্যক্ত হতে পারছে না …..সাধন দ্বারা তার আবরণ ভেদ করলে সেটি অভিব্যক্তি হয়ে উপলব্ধ হয়।”
“যা লৌকিক দৃষ্টিতে অসম্ভব বলে মনে হয়, বিশ্বাসের বলে এমন বহু কিছু সংঘটিত হতে পারে। কী ভাবে কোন্ শক্তির দ্বারা কোন্ কাজটি সাধিত হয়, তা মানুষ বুঝে উঠতে পারে না।”
“সূক্ষ্ম অব্যক্ত এবং স্থূল ব্যক্ত, এই দুই স্তরেই পরমসত্তা শিব বিদ্যমান।”
“যদি বহির্মুখী বৃত্তিকে অন্তর্মুখী করতে পারো, অন্তরে প্রবেশ করে দেখবে, বাহ্যটি অন্তরেই বিদ্যমান, স্থলও অবস্থান করে সূক্ষ্মেরই গর্ভে।”
“‘আমার বলে কিছু নেই, সবই তোমার, তুমিই সব’—এই জ্ঞানাগ্নিতে মমত্ববোধক অজ্ঞানতাকে আহুতি দেওয়াই যথার্থ যজ্ঞ।