কনফুসিয়াস ৫৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীনের শানতুং অঞ্জলি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইনি তৎকালীন লু রাজ দরবারের হিসাবরক্ষক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। পরবর্তীকালে ইনি এই লু রাজ প্রদেশের আইন রক্ষার কাজের যুক্ত হয়েছিলেন। অপরদিকে ইনি একজন ছিলেন দার্শনিক। অবশেষে ইনি ৪৭৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এনার কিছু উপদেশ নিচে উল্লেখ করা হলো।-
“দয়া, সততা, পবিত্রতা, ভালোবাসা, জ্ঞান, মহত্ত্বতা মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ গুণ।”
“বিভিন্ন গুণের মধ্যে দিয়ে মানুষ নিজেকে দেবত্বে উন্নীত করতে পারে এবং অন্যের শ্রদ্ধা ভালোবাসা অর্জন করতে পারে।”
“নতুন কোনো ধর্মপ্রচার না করেও দেশে ধর্মবিপ্লব নিয়ে আসা সম্ভব।”
“আমি বাস্তববাদী ধর্মের কথা বলতে চাই।”
“আমি বিশ্বাস করি মানুষের বুকের মধ্যে ঈশ্বরের বসবাস। মানুষের শরীর হল স্বর্গ।”
“আমার আগে যারা পৃথিবীতে এসেছিল, তারা এই জগতের দুঃখ, দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি শুধু নিজের মুক্তি চাই না, চাই জগতের দুঃখ দূর করতে। শুধু দুঃখ রয়ে গেল, আমার উপদেশ কোনো রাজা গ্রহণ করল না।”
“সকলের আগে তোমরা সৎ হও, আদর্শবান হও, ন্যায়ের পথে চলো, একমাত্র তবেই দেশের উন্নতি সম্ভব।”
“রাজ্য জুড়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে রাজার পাশে এসে দাঁড়ানো উচিত।”
“একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ তাঁর পারিপার্শ্বিক সমস্ত কিছুকেই গভীরভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে।”
“শ্রেষ্ঠ মানুষেরা মনে করেন ঈশ্বরের ইচ্ছায় সবকিছু চালিত হয়।”
“সাধারণ মানুষ ভাগ্যের হাতে নিজেকে সঁপে দেয়।”
“শ্রেষ্ঠ মানুষ সর্বদাই নিজের ত্রুটি বিচ্যুতিকে বড়ো করে দেখে। এবং এই ত্রুটি বিচ্যুতিগুলি দূর করে জীবনকে আরো উঁচুতে নিয়ে যাওয়াই থাকে তার লক্ষ্য।”
“সাধারণ মানুষ মনে করে সে সর্বদোষ মুক্ত।”
“মহত্ত্বতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল দয়া এবং ত্যাগ। নিহল দয়া এবং ত্যাগ।”
“পৃথিবীর সকল মানুষই সমান। প্রত্যেকেই একই ঈশ্বরের সন্তান ৷”
“অন্যের প্রতি যখন মানুষের দয়া ও ভালোবাসা জাগ্রত হয়, তখন সে হবে প্রকৃত অর্থে মহৎ মানুষ। তার ওপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ নিয়ত বর্ষিত হয়।”
“অর্থলিপ্সু মানুষ কখনো মহৎ হতে পারে না। সে নিয়তই ঈশ্বরের কাছে থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে।”
“শিক্ষা ছাড়া জ্ঞান সম্পূর্ণ হয় না। শিক্ষার সন্ধানে সর্বত্র ভ্রমণ করতে হয়।”
“ক্ষমতার লোভে প্রবল প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে ওঠা উচিত নয়। দুর্বলকে রক্ষা করাই রাজার মহৎ কর্ম।”
“পিতার কর্তব্য শুধুমাত্র সন্তানকে ভরণ-পোষণ করা নয়, তাকে প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া। যে পিতা তার ওই কর্তব্য পালন করে না, সে সন্তানের জন্ম দান করলেও পিতা হয় না আর পিতা যদি তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়, তবে পুত্র কখনো আদর্শবান হতে পারে না ।”
“একজন শাসক তখনই সফল যখন তিনি প্রকৃতই শাসক। বৃদ্ধ সকল সময় বৃদ্ধ, পিতা প্রকৃতই পিতা এবং পুত্র সত্যিকারের পুত্র।”
“যিনি প্রকৃত শাসক তার মধ্যে একাধিক শাসক তাঁর মধ্যে একাধিক গুণের সন্নিবেশ ঘটবে। একটি গুণের অভাব ঘটলে তিনি প্রকৃত শাসক বলে পরিগণিত হবেন না।”
“প্রভুর প্রতি বিশ্বস্ততাই হল ভৃত্যের ধর্ম। যে ভৃত্য বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রভুর অমর্যাদা করে সে কখনো আদর্শ ভৃত্য হতে পারে না।”
“প্রকৃত জ্ঞান শুধু পুঁথির মধ্যে পাওয়া যাবে না, চারপাশের জগতে ছড়িয়ে আছে জ্ঞানের উপকরণ। ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে বসে সেই জ্ঞানকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।”
“সমাজজীবন, ব্যক্তিজীবন, রাষ্ট্রনৈতিক জীবন—সর্বক্ষেত্রেই প্রয়োজন শৃঙ্খলা, এই শৃঙ্খলা রয়েছে প্রকৃতির মধ্যে। ঈশ্বরের সমস্ত বিধানের মধ্যে। তাই দিনরাত্রি, সপ্তাহ, মাস, বছর, বিভিন্ন ঋতু একই নির্দিষ্ট নিয়মে আবর্তিত হচ্ছে।”
“আইন বা দণ্ডের দ্বারা শৃঙ্খলাকে সমাজজীবনে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। আইন যতই কঠোর হবে, ততই তাকে অমান্য করার ইচ্ছা মানুষের মধ্যে প্রবল হয়ে উঠবে। একমাত্র মানুষের অন্তরের বিবেকবোধ নীতিবোধ তাকে সঠিক শৃঙ্খলার পথে চালিত করতে পারে। আর এই বিবেকবোধ তখনই মানুষের মধ্যে জাগ্রত হবে যখন ধর্মীয় চেতনা জেগে উঠবে।”