Bimola Prasad Mukhopadhyay Quotes | বিমলাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মোটিভেশন বাণী সমূহ

Bimola Prasad Mukhopadhyay Motivation Quotes
Photo from pixabay.com

“হাট-বাজার আর দোকান-পসারের মধ্যে আছে অনেকটা পার্থক্য, প্রথমটাতে আছে গতির আভাস, দ্বিতীয়টিতে স্থিতির। একটা হল যাযাবর মানুষের মনের প্রতীক, অপরটি হল স্নানু, নিশ্চিত ও নিরাপদ মনের পরিচয়। একটিতে পাই ধুলো আর মাটি আর খোলা আকাশ, অপরটিতে গদি অথবা কেদারা এবং বিজলি পাখা।

শতবার হাটে ঘুরে বেড়ালেও তাকে আমরা বাঁধতে পারি না আয়ত্ত করতে পারি না তার সমগ্র শরণশীল সত্তাকে। কিন্তু দোকানকে আঁকড়ে রাখি তালা-চাবি, সাইনবোর্ড আর নিয়ন লাইট দিয়ে। হাট যখন ভাঙে গোধূলির আলোয় তার ভাঙা চেহারা মনে আনে কাব্যের আবহ। নিস্তব্ধ প্রান্তরে বট-পাকুড়ের শাখায় বাদুড়ের কিচিমিচি, জনহীন হাটের প্রাঙ্গণে প্রাঙ্গণে শূন্য গুড়ের কলসিগুলোর গড়াগড়ি, আলকাতরা মাখানো জীর্ণ দু-একটি দরজায় বাতাসের অদ্ভুত আওয়াজ আর ঘনায়মান অন্ধকারে উপুড় করা কালো কালো মেটে হাঁড়িগুলো এমন একটি অতি নৈসর্গিক রিক্ততার ছবি ফুটিয়ে তোলে, যেটি ঘুমন্ত শহরের নির্জনতম পথে বন্ধ দোকান-পাটের গায়ে খুঁজে পাওয়া যায় না।

এটা শুধু প্রকৃতি পটভূমির গুণ নয়, দ্রব্যেরই গুণ। হাট যতক্ষণ বেঁচে থাকে, প্রচুর কোলাহলের মধ্যে দিয়েই তার জীবন-ঘোষণা। আবার মৃত্যু যখন নামে, সম্পূর্ণ তার পরিসমাপ্তি— নীরন্ধ্রতার অবলুপ্তির অন্ধকার। দোকানপাট কিন্তু মরেও মরে না, তাদের চেহারা ভয়াবহ রকমের নিঃস্ব লাগে না। তার মূর্ছিত মাত্র নাগরিক জীবনের স্তিমিত ধারায় তারা ঝিমিয়ে থাকে। একটিতে রয়েছে গ্রাম্যতার সরল স্পর্শ অপরটিতে আছে নাগরিকতার জটিল ছাপ।

যে কোনো বস্তু পদার্থ, প্রাণীর মধ্য অবস্থা ও রূপটাই আমাদের ভালো লাগে।…….. শক্তি, বুদ্ধি ও সৌন্দর্যের মিশ্রণটা জোরালো রকমের পরিস্ফুট। ডাঁসা ও মাঝারি পাকা জিনিসেরই আমরা খোঁজ করে থাকি ।”

“মৃত্যু-চিন্তা হল আত্মপ্রীতির সেরা নমুনা। রাসায়নিক বিশ্লেষণে দাঁতের কি-ই বা মর্যাদা। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দাঁত ও হাসির অনেকখানি গুরুত্ব। যে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়েছে, যে মানুষের চরিত্রে শ্লীলতার আবরণ খসেছে, যে মানুষ দেঁতো হাসি হাসে, সে মানুষের ব্যক্তিত্ব অশ্রদ্ধেয়। যার হাসিতে দাঁত ও মাড়ি বেরিয়ে আসে, তাকে আমরা শালীন আখ্যা দিতে নারাজ। কথায় কথায় যার একগাল হাসি তাকে আমরা অন্তঃসারশূন্য উদারতায় ভূষিত করি। মোটাসোটা গম্ভীর যখন পান্তুয়া হাসি হাসেন, তখনই আমরা কাছে এগুতে ভরসা পাই আর রুক্ষ কৃশকায় ব্যক্তির আন্তরিক হাসিকেও আমরা সন্দেহের চোখে দেখি।”

“বই পড়া যাঁর নেশা আর বই লেখা যাঁর পেশা এ দুজনের মধ্যে আন্তরিক সমমর্মিতা ঘটলে হয় সাহিত্যসৃষ্টি এবং পরিণতি-কামী যথার্থ সাহিত্যের অগ্রগতি। তখন জীবন আর জীবিকা মুখ ফিরিয়ে দাঁড়ায় না। নেশায় জমে মৌতাত, মেটে মনের ক্ষুধা। পেশায় আছে প্রাণধারণের গ্লানি, হয় উদরান্নের সংস্থান । সাধারণ বাস্তবজীবনের নেশা আর পেশার এলাকা স্বতন্ত্র। পরস্পর সাহায্য না করে বিরুদ্ধ সম্পর্ক নিয়ে ওরা পথ রুখে দাঁড়ায়।”

“শাড়ির সঙ্গে নারীর যে যোগ, সেই যোগসূত্রে আসে পুরুষের মন—আসে কাব্যের দৃষ্টি এবং নারী পৌত্তালিকতা। সন্তুষ্টির বীজ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয় শিল্প-ব্যবসায়। প্রতিফলিত হয় সমাজতত্ত্ব, সংযুক্ত হয় রাজনীতি ও অর্থনীতি, বিকশিত হয় নন্দন-বিদ্যা । শাড়িতেই পাওয়া যাবে সামাজিকতার ছাপ। সমাজরীতি, সমাজনীতি, সমাজরুচি এক কথায় সমাজ চেতনার মূক জাগৃতি স্বীকৃত হয় শাড়ির মধ্যস্থতায় ৷”

“নিমন্ত্রণের ভিত্তিটাই হল পরচর্চা।”

“আহারের মধ্যে যে রস আছে সেটি যদি সমস্ত শরীরে যথাযথভাবে সঞ্চারিত হতে পারে, তাহলে শরীর কোষের স্ফূর্তি সাধন তো হয়ই, উপরন্তু দুর্বল পেশী ও জটিল গ্রন্থিগুলিও সতেজ এবং সবল হয়ে ওঠে। তারই প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হয় রসসৃষ্টির তাগিদে—একটা উষ্ণ মধুর পরিমণ্ডল রচিত হয়, সেখানে ‘ বাক্যটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ সত্যই সার্থকতা খুঁজে পায়। তা হলে দেখা যাচ্ছে, ঠিক কার্যকারণের শৃঙ্খলের মধ্যে না পড়লেও খাদ্য ও সাহিত্য একটা সমগোত্র রসে পরিপাক হচ্ছে। রসই ওদের পিতা, জনকস্বরূপ। সাহিত্যের বেলায় মনন হল সে রসের ধারণাপাত্র আর আহারের ক্ষেত্রে পাকস্থলী। তাই তফাত হয়ে গেল কেবল আধারের দোষে। খাদ্য ও সাহিত্যের এক পিতৃত্ব সত্ত্বেও তাদের পারস্পরিক সম্পর্কটা দাঁড়িয়ে গেল দুই শরিকের মতো।”

“বইয়ের নেশা যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে অবিশ্যি ক্ষতির আশঙ্কা আছে, পুস্তককীট হয়ে পড়লে শুধুই যে ক্ষীণ দৃষ্টি বাস্তব জ্ঞানবর্জিত পণ্ডিত মানুষ অকর্মণ্য হয়ে যায়, তা নয়, জীবন তথা সংসার ও সমাজের সঙ্গে সম্পর্কটাও ক্ষীণ হয়ে আসে।”

Leave a Reply