Ahmed Sharif Quotes in Bengali – আহমদ শরীফের ৪৫+ বিশেষ মানমুগ্ধকর বাণী সমুহ । সমস্ত বাণী বাংলায় জানুন ।
আমার অধিকার শিকার না করলে তোমার অধিকারও স্বীকার করবো না।- এ কথার মধ্যে কোন অন্যায় গোঁয়ার্তুমি নেই।
একজন অপরাধীর সকল সুকীর্তি তার দুষ্কর্মের ন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায়।
শিক্ষাহীনতা এবং অজ্ঞতার মত অভিশাপ আর নেই।
অস্ত্র নির্মাণ, মারণাস্ত্রের ব্যবসা ও মারণাস্ত্রের ব্যবহার দ্বারা তথাকথিত মানবতাবাদীর প্রবক্তা দেশগুলোই প্রমাণ করেছে তারা মানবতার শত্রু।
পিতা ও পিতামহাদিদের অঢেল ধন-সম্পত্তির আস্ফালন বর্তমানের ভিক্ষাজীবী বংশধরদের লাভ
যে সামাজিক ক্ষেত্রে ও যে দেশে আইনের নিজস্ব শাসন নেই, যে দেশে আইন কেবল ক্ষমতাশীলদের কথা শুনে, সেদেশে বা সে সমাজে মানবাধিকার পদে পদে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়।
আইনের যদি নিজের শাসনটাই প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে মানুষ দেশের আইনের উপর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা উভয় হারিয়ে ফেলবে।
যার নিজস্ব আত্ম-মর্যাদাবোধটাই নেই, সে সর্ব ক্ষেত্রে মাথা হেট করে চলে থাকে।
অসৎ, অনাচারী, দুর্নীতিপরায়ণ, মিথ্যাবাদী, ধোকাবাজ লোক সত্য আয়নার সম্মুখে দাঁড়াতে ভয় পেয়ে থাকে।
চিন্তা ভাবনা থেকেই বৈজ্ঞানিক যাথার্থ্যতার আবিষ্কার। সেই কারণে মানব জীবনে অনুমানের ভূমিকা সীমাহীন।
যে সমস্ত দেশ বা সমাজে গুণীজনদের অগ্রহ বা সমমান করা হয় না, সে দেশ বা সমাজেতে কিন্তু বেশি গুণীব্যাক্তির জন্মই বিশেষত হতে পারে না।
জ্ঞানই শক্তির, ক্রমোন্নতি ও মানুষ্যমৈত্রীর প্রধান উৎস
দেশপ্রেমের পরিমাণ অনেক বেশি গভীর হলেই, নিজের জীবনের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করা যায়।
আপাত দৃষ্টিতে দুর্নীতিবাজরাই কিন্তু দুর্নীতির দুর্নীতি বলে চিৎকার করে বেশি
ধর্ম খারাপ আত্মাকে করে সংযমন, ভালো আত্মা গুলিকে রাখে সঙ্কুচিত করে, খুশিকে করে দুষ্প্রাপ্য, অসন্তোষ কে করে চিরকাল ধরিয়া, অনুভবকে করে নিরব, দুঃখকে করে দৃষ্টিহীন, উপলব্ধি হয় অবয়বশূন্য আর হয় খুবই কম, শক্তিশালী ও শক্তিহীন, জ্ঞানবান ও অশিক্ষিত, সহায়ক ও দুরন্ত সমভাবেই থাকে।
ধর্ম মানুষের উদ্ভবনী শক্তির একটি বিস্ময়কর আবিষ্করণ। ধর্ম মানুষের আত্মার উথলে ওঠার ভাব, বাসনার উচ্ছৃঙ্খলতা, স্পৃহার অজেয়, ব্যাবহারের নিয়ন্ত্রণহীনতা, ভাবনার স্বতন্ত্রতা, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণার বহুবর্ণময়, নানান এক নিয়ম অনুযায়ী ধাপে চালিয়ে নিয়ে গিয়ে যন্ত্র-বিশারদ ক্ষেত্রতত্ত্বতে সীমাবদ্ধ রাখে।
প্রকৃতির নিয়মই যেসব কিছু পুরাতন হয়, সেগুলোকে জড়তা ও জীর্ণতা জড়িয়ে ধরে, ধ্বংসের বির্জ তার কাজে নিযুক্ত। কাজেই নতুনের অমোঘ প্রতিষ্ঠা ও প্রসার একসময় অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
চলন্ত জীবনে অগ্রসর মানেই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আর সামনের দিকে গেলেই জায়গা ও সময়কে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হয়। অর্থাৎ পুরাতনকে ত্যাগ ও আধুনিককে স্বীকারের নামই হলো ক্রমোন্নতি। আর সকলেই জানে অগ্রগতিই জীবন ও ষষ্ঠীতে প্রাণত্যাগ। আর এগিয়ে যাওয়া মানেই প্রকৃতিগত অগ্রসরণ। প্রাচীন হচ্ছে বিগত, আর অভিনব মানেই হলো ভবিষ্যতের নিদর্শন।
নিষ্ঠাহীন আস্তিক হচ্ছে মক্কর ও মোনাফিক। তার থেকে নৈতিক জীবনসমূহ ক্ষতি হয়, কিন্তু নাস্তিকেরা সাধারণত বিবেকবান, বুদ্ধিজীবী, যুক্তিবাদী, কল্যাণকামী ও নৈতিক সাহসে ঋদ্ধ। এজন্য নাস্তিক থেকে নৈতিক বা বৈসয়িক ক্ষতির কোন আশঙ্কা থাকে না।
পূর্বপুরুষদের অর্থ সম্পদে যে ব্যাক্তি ধনী, সেই ব্যক্তির অর্থ সম্পদে অনুন্নতি আছে উন্নতি নেই। নিজের অর্জন করা সম্পদে মান ও মর্যাদা আছে, সম্মান আছে, আছে লাবণ্য।
আজকের জগতে ধার্মিক গুরুবাদীরা উন্নয়নশিলতার অন্যতম বিপক্ষ।
চাহিদাবহীন প্রচেষ্টা অস্বাভাবিক। তাই প্রচেষ্টার আবেগহীন ব্যাক্তি নিস্তব্ধতা ও ক্ষীণতার শিকার হয়ে থাকে। স্রোত সংযুক্ত নদী প্রাণের সঙ্গে সমমূলক, স্রোত বিহীন জল আর কামনাহীন জীবন দুটোই বিনাশশীল ও জরাজীর্ণ পূর্ণ।
শরীরে সৌন্দর্য, সৌন্দর্যে চাহিদা, চাহিদায় ভালোবাসা, এবং ভালোবাসাই প্রাণের নিষ্কৃতি।
বিশ্বের সর্বোত্তম ছবি, ভাস্কর্য, সাহিত্য, নাচ ও গান ভালোবাসা-নিদর্শন । এছাড়া অনেক ধর্ম ও দর্শনও ভালোবাসাবাদী।
পৃথিবীব্যাপী আদিসমাজে মানুষের মনে ও মননে, কর্মে ও ধর্মে শৃঙ্গারই পেয়েছে প্রাধান্য। শৃঙ্গারের নাম তাই আদি রস।
এই বিশ্বভবন ব্যাপী আদিম সমাজে মানুষজনের হৃদয়ে ও চিন্তনে, কাজে ও কর্মে পূর্বরাগ পেয়েছে প্রাধান্য। পূর্বরাগের নাম তাই পুরনো রস।
দার্শনিকদের দৃষ্টিতে যাই হোক, সর্বজনীন এর উপলব্ধি ইচ্ছা ও ভালোবাসায় বিভেদ সল্প। এবং দার্শনিকদের দৃতিতে দুটোই দৃঢ় জয়শীল।
বয়:সন্ধি থেকে মধ্যবয়স্ক বয়স পর্যন্ত ব্যাক্তি মানেই মনে ইচ্ছা বাসনার সহজবোধ্য থেকে কঠিনবোধ্য কার্য চলতে থাকে। কর্মেই ইচ্ছা মানুষের অত্যাধিকতম অধিকার। সে অধিকার মতপ্রকাশ পায় ভালোবাসা-সৌন্দর্য, অনেক সময় অনুভূতি, আদর ও আগ্রহরূপে।
ভালোবাসা অথবা যন্ত্রণা, প্রলোভন অথবা পরহিংসা, রাগ অথবা সহনশীলতা, মার্জনা অথবা প্রতিশোধ, বিশ্বস্ততা অথবা কৃতকার্যতা, সমস্তই জীবন্ত কামনা-আকাঙ্খা, কার্যকলাপ ও প্রতিক্রিয়া দেশ বা অঞ্চল ভেদে আলাদা কিন্তু হয় না। মানুষে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মাত্রার পার্থক্য হয় কেবল।
পড়াশুনায় জ্ঞান বৃদ্ধি হয়, স্বভাব গঠিত হয় না। পুঁথিগত পাঠের প্রভাব বিষয় মূলক কাজের নিপুণতা, হৃদয় ও মানসিক অবস্থার চালিকা শক্তি নয়। পুঁথিগত জ্ঞান যেন জলের মতো পাতলা পদার্থ, যে ভাণ্ডারে নিবিষ্ট হয়ে থাকে, সেই ভাণ্ডারেই আকৃতি পায়, অথবা তা সুলেমানি আংটির মনিবের উদ্দেশ্য পূরণের সাহায্যকারী মাত্র। ব্যক্তিগণ পুঁথিগত বিদ্যার আজ্ঞাবহ হয় না, বিদ্যাকে আজ্ঞাবহ করে বিশেষ লক্ষ বা উদ্দেশ্য সম্পাদনের কাজে লাগায়। এই তরেই জ্ঞান শক্তিমত্তা রীতি নয়।
ছলনা, শঠতা-ধূর্ততা, খপ্পর-জালিয়াৎ, অসৎ-অকর্ম, জুলুম, ঘৃনা-পরদ্বেষ, নিন্দা, প্রভৃতি সময় ও কালের সামাজিক অসুবিধার তরে শিক্ষিত ব্যক্তিগণই তো বিশেষ ভাবে দায়ী।
ভদ্রতা ও নম্রতা সভ্যতার সুনাগরিকের সজ্জনতার ভালো প্রকাশ।
মানুষের সমাজে পুরানো ও নতুনে বিবাদ-মোকাবিলা লাগে বটে। কিন্তু চূড়ান্তভাবে জিত নতুনেরই হয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও মানুষ আজীবন ধরে ইতিহাসের এই প্রমাণ অগ্রাহ্য করে চলেছে।
মনোনয়ন বা ভোটাধিকার ব্যবহার সমস্ত অসুবিধার মীমাংসা করে দেবে। এসব যারা চিন্তাভাবনা করে, তারা মূর্খের জায়গায় বসবাস করে। মনোনয়ন ক্ষমতায় যাবার একটা কার্যপদ্ধতি ব্যতীত আর কিছুই নয়।
বাণী বা বার্তা প্রদানকারীকে খুন করা, কিন্তু বাণী বা বার্তাকে মোটেও নয়।
মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে যেমন সামাজিক, তেমনি রাষ্ট্রিক জীবনেও মানুষের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছার মতো খাঁটি সম্পদ, সার্থক সঞ্চয়, অক্ষয় পুঁজি ও নির্ভরযোগ্য পাথেয় আর কিছুই নেই। এই প্রীতির পরিচর্যা ও শুভেচ্ছার অনুশীলনই মানুষকে মানববাদী করে। দেশে দেশে মানবতাবাদীরা সংখ্যাগুরু হয়ে না উঠলে আজকে মানবিক সমস্যার সমাধান অসম্ভব।
মানুষ একাকী থাকতে এবং কেবলমাত্র নিজের জন্য বাঁচতে পারে না। অপরের জন্য বাঁচতেই মানুষের সুখ এবং সার্থকতা।
পীড়নের মাধ্যমে যে প্রশান্ত, আতঙ্ক-ত্রাস, সন্ত্রাস-সংহার মাধ্যমে যে সমাজবদ্ধ-প্রদেশিক প্রশান্তির কথা কিছু অধ্যাত্মবাদী কল্পনা করে থাকে, তা কবরের শান্তিপূর্ণ অবস্থার সাথে উপমেয়.
এই বর্তমান যুগে নিষ্ঠাবান ও ন্যায়পরায়ণ হওয়া খুবই কঠিন। কারণ নিষ্ঠাবান ও ন্যায়পরায়ণ মানুষেরা এই সমাজে কাণ্ডজ্ঞানহীন বলে পরিচিতি লাভ করে থাকে।
একযোগে কাজের মাধ্যমেই আত্মোৎকর্ষ এবং বিশ্বের শ্রীবৃদ্ধি নির্ভর করে থাকে।
নাগরিক বা জনসাধারণকে শিক্ষিত ও সুনাগরিক হিসেবে বানিয়ে তোলার মধ্য দিয়েই একমাত্র সম্ভব সাম্প্রদায়িকতার ও হিংসার বিষদাঁত ভেঙে ফেলা।
এই অশিক্ষা-কুশিক্ষা, সংস্কার-কুসংস্কার ও ধর্মান্ধ দেশে অনেক বয়স্ক ব্যক্তিত্ব নাবালক থেকে যায়। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত অনেকের সাবালকত্ব প্রাপ্তি ঘটে না।
যে সমস্ত ব্যক্তির সাহসিকতা নেই সে সব মানুষ কাপুরুষ। জীবিত থেকেও তারা যেন মৃত।
ছোটো ও নিকৃষ্ট পূর্ণাঙ্গতার গৌরভ ও তাৎপর্য দেওয়াটাই সাহিত্যধারীদের বিশেষ কাজ।
সমস্ত ধরনের খুন করা নিঃসন্দেহে খুবই নিন্দনীয়। কিন্তু ধর্মের নামে, বর্ণের নামে, গোত্রের নামে, সাম্প্রদায়ের নামে মানুষকে খুন করা সবচেয়ে ঘৃণিত।