স্বামী অখণ্ডানন্দ ১৮৬৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের কলিকাতা জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইনি একজন অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনে বিশ্বাসী সনাতন ধর্ম গুরু ছিলেন। তিনি একজন সেবা ধর্মী মানুষ ছিলেন তাই দুর্ভিক্ষের সময় তার নিকটবর্তী এলাকাতে করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি একটি আশ্রম ও বিদ্যালয়ও স্থাপন করেছিলেন। তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের একজন অধ্যক্ষও ছিলেন। অবশেষে এনে ১৯৩৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বেলুড় মঠে মারা যান। এনার কিছু বানী নিচে উল্লেখ করা হল –
“নিজেকে যতো লোকের মধ্যে বিলিয়ে দেবে ততোই ‘আনন্দ’ লাভ করবে। যদি নিজেরটা নিয়েই ব্যস্ত থাকো, যতো নিজেকে জড়িয়ে ফেলবে, ততোই ছোট হয়ে যাবে। পরকে নিজের মতো যতো দেখতে শিখবে ততো তোমার হৃদয় উদার হবে এবং আত্মজ্ঞান লাভ হবে। … যতো দূর পারবে ধৈর্য-ক্ষমা-সংযম রাখবে। ……নির্বিকার থাকবে, কিছুতেই রাগবে না। মনে কতো ঝড় ঝাপটা বয়ে যাবে, তবু মনের কোনো বিকার হবে না। প্রত্যেক মানুষেরই স্ব-স্ব সুখ সাধনের সমান অধিকার আছে। যে সমাজ শাসন তা স্বীকার করে এবং স্বাধীনভাবে মানুষ-মাত্রকেই উন্নতির দিকে নিয়ে যায়, তা-ই ঈশ্বরাভিপ্রেত এবং সেই সমাজেই চির শান্তি।….মনুষ্যোন্নতির প্রতিবন্ধক স্বরূপ যে শাসন, তা কুশাসন।”
“আত্মার মধ্যে মহাশক্তি নিহিত, তাকে যতো ফুটিয়ে তুলবে, ততো আত্মবিকাশ হতে থাকবে।… গণ্ডীর মধ্যে বদ্ধ থাকবে না।”
“এক-আধবার কোনো প্রকার ভুল করে ফেললে অনুশোচনা হওয়া ভালো, কিন্তু কেবল তাই ভেবে কোনো ফল হয় না। মনে দৃঢ় সংকল্প করতে হয়, আর যেন কখনো ভুল না হয়। ….ভগবানের কাছে ব্যাকুলভাবে নিয়মিত প্রার্থনা করবে এবং নিজের কথা অকপটভাবে নিবেদন করবে। আন্তরিকভাবে তাঁকে জানালে তিনি সব ঠিক করে দেবেন। … প্রাণপণে জীবন গঠনের জন্য সমস্ত শক্তি নিয়োগ করো। তবেই ‘প্রকৃত শান্তি ও আনন্দের অধিকারী হতে পারবে।”
“মনে নীচ প্রলোভনের কথা তখনই জাগে, যখন মন শূন্য থাকে। সেইজন্য সর্বক্ষণ মনকে সৎকাজে, সৎ ও চিত্তাকর্ষক গ্রন্থাদি পাঠে এবং সৎপ্রসঙ্গ আলোচনায় ব্যস্ত রাখতে হয়। অলসভাবে থাকা বা হাল্কা আমোদ-প্রমোদের কুৎসিত কথায় যোগ দেওয়া যেন কিছুতেই না হয়।… সব সময় মুখ গম্ভীর করে থাকাও ঠিক নয়। হাসবে, ভালো গল্প করবে, তবে তো মন প্রফুল্ল থাকবে।”
“ভগবান নিকটতম, কারণ তিনি হৃদয়ে। জীব ‘অবিদ্যা’-গ্রস্ত তাই তাঁকে দেখতে পায় না, দূর মনে করে। তিনি প্রাণের প্রাণ, মনের মন।… সব তাঁর কাজ মনে করে করবে। যখন মন স্থির হয় না, তখন মনে মনে অনেক রকম ফুল ও নৈবেদ্য সাজিয়ে ইষ্ট দেবতাকে নিবেদন করবে। মনটা সম্পূর্ণরূপে তাঁতে লাগিয়ে রাখবে, মনসা পূজা করবে। তা হলেই মন ঠিক হয়ে যাবে। এই রকম ভাবতে ভাবতে ধ্যান আপনি জমে যাবে।…হৃদয়ের স্ফুরণ হওয়া চাই, তা যদি না হয় তো, চোখ বুজে থাকলেও কিছুই হবে না।”
“অসুখ হলে…..মনে করবে ‘আত্মা তো অমর, আমার আবার রোগ শোক কী? ‘যতো এরকম ভাববে, ততো দেখবে রোগের দিকে মনটা না গিয়ে আত্মার দিকে যাবে। আর মনটাকে যতো এই দেহের দিকে ফেলে রাখবে ততো এই অসুখ তোমাকে জড়িয়ে ধরবে।”