শ্রীমৎ স্বামী বিজ্ঞানানন্দ ১৮৬৮ সালের অক্টোবর মাসে বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলিকাতা জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন, সংস্কৃত বিশেষের সঙ্গে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়েও দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। তিনি অদ্বৈত বেদান্তে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি পরবর্তীকালে ২৮ বছর বয়সে সন্ন্যাসী জীবন গ্রহণ করেছিলেন।
স্বামী বিজ্ঞানানন্দ শ্রী রামকৃষ্ণের একজন সান্নিধ্যকৃত শিষ্য ছিলেন। তিনি শেষ জীবনে অর্থাৎ মৃত্যু হওয়ার এক বছর বা দুই বছর আগে রামকৃষ্ণ মিশনের সভাপতির পথ গ্রহণ করেছিলেন। অবশেষে ১৯৩৮ সালের এপ্রিল মাসে ভারতের এলাহাবাদে জীবন এনার অবসান ঘটে। নিচে স্বামী বিজ্ঞানানন্দ কিছু বাণী উল্লেখ করা হল।
“জাগতিক বিষয়ের প্রতি অত্যধিক আসক্তি এবং এগুলির জন্য তীব্র আকাঙ্খা থেকেই সৃষ্টি হয়ে থাকে মানসিক চাঞ্চল্য …. প্রচণ্ড জীবন সংগ্রামের ভেতরও মানসিক সাম্য রক্ষার সাধনা করো।”
“প্রকৃত শান্তিলাভ করতে হলে ত্যাগ চাই, আত্মসংশোধন চাই। তা আধ্যাত্মিক জীবনেই বলো বা রাজনৈতিক জীবনেই বলো স্বার্থত্যাগের জন্য প্রস্তুত না থাকলে কোনো কালেই সফলতা আশা করা সুদূরপরাহত।”
“মনের দ্বারাই মনকে শাসন করবে। অধ্যবসায় না থাকলে কোনো বড় কাজ হয় না। অলসতা আর কপটতাকে মোটেই প্রশ্রয় দেবে না। নিজের সাধ্যমতো আন্তরিক চেষ্টা করলে ভগবান অনন্তগুণ অধিক শান্তি দেবেন।”
“যখন তুমি নিঃস্বার্থভাবে কর্মরত হবে তখনই প্রকৃত বিশ্রাম-সুখ’ অনুভব করবে। বীরের মতো কাজ করে যাও। যদি সময়ের ঠিক ঠিক ব্যবহার করো তো অনেক কাজ করতে পারবে। প্রত্যেক কর্মের ফল অবশ্যম্ভাবী। … সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কাজ করাও ঈশ্বরের পূজা বলে জানবে………তাতেই বিকাশ হয় ভগবানের শক্তির।”
“মনে যে ভাবই আসুক, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না, নিজের সাধন ঠিক করে যাবে……জপ ধ্যানে পরিণত হয়, ধ্যান সমাধিতে।”
“খুব বিশ্বাস চাই, ভরসা চাই, ধৈর্য চাই। ক্রমে সব হয়ে যাবে। যখন খুশি জপ করতে পারো। সর্বাবস্থায় জপ করা চলে তাঁর স্মরণ মনন নিয়ে কথা।”
“মায়ের কাছে চিত্ত শোধনের প্রার্থনা করবে। তিনি সব ঠিক করে দেবেন। ….. মন যখনই পবিত্রতায় প্রতিষ্ঠিত হবে, তখনই ভূমানন্দের আস্বাদ পাবে। সে আনন্দের তুলনা নেই।”
“প্রত্যেক বস্তুরই তিনটি দিক আছে—নাম, রূপ ও মূল সত্তা। যতোক্ষণ না নামরূপের গণ্ডীর পারে যাবে, ততোক্ষণ সত্যের অন্তঃস্থল বা মূলসত্তায় পৌঁছতে পারবে না। আর যখন সকল পদার্থের সত্তারূপে আত্মাতে পৌঁছবে তখনই লাভ করবে প্রকৃত শান্তি।”
“কল্পে কল্পে একই ভাবে সৃষ্টিপ্রবাহ চলছে।”
“সমগ্র জগতের জন্য সৎ চিন্তাধারা প্রবাহিত করবে। ‘সকলের মঙ্গল হোক’—এটি রোজ প্রার্থনা করা উচিত।”
“প্রেম ও বিচারকে এক করতে হবে। ভগবান লাভের জন্য দুটিই চাই।”
“জীবের ভেতরে যিনি আছেন, তিনি অনাদি, অনন্ত, জন্ম-মৃত্যু-রহিত।……তিনিই সব করছেন। তিনি স্বাধীন স্বতন্ত্র….তাঁর ইচ্ছাতেই আমরা বেঁচে আছি।……এই জীবনই যখন তাঁর, তখন কেন মিছে দুনিয়ার ওপর আসক্তি! আমাদের কর্তব্য হচ্ছে তাঁর .. দাস হয়ে থাকা, তাঁর বিষয়েই চিন্তা করা।”
“ভগবানের কথা বেশি শুনে কী হবে? ….. সাধনে লেগে পড়ো…..যেটুকু শুনবে তা- ই জীবনে প্রতিফলিত করার চেষ্টা চাই।”