প্রবোধকুমার সান্যাল ১৯০৫ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইনি একদিকে ছিলেন যেমন সাহিত্যিক ও পরিব্রাজক তেমনি অপরদিকে ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। এর জন্য একে কারাবাস থাকতে হয়েছিল। অবশেষে ইনি ১৯৮৩ সালের এপ্রিল মাসে শেষ ত্যাগ করেন। এনার কিছু উক্তি নিচে উল্লেখ করা হলো।
“মানব সৃষ্টিতত্ত্বের মূলে রয়েছে চরম অশ্লীলতার বিশাল অগ্নিকুণ্ড।”
“এই ক্ষণভঙ্গুর জীবন সম্বন্ধে আমরা নিরন্তর সন্ত্রস্ত, কেবলই আমাদের সতর্কতা, অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর দিকে আমরা ক্ষণে ক্ষণে তাকাই, প্রতিদিন প্রভাত থেকে রাত্রি পর্যন্ত মৃত্যুর কবল থেকে আত্মরক্ষা করতে করতে সবাই আমরা ক্লান্ত হয়ে উঠি। অথচ জানি একদিন আর পালাতে পারবো না। ধরা একদিন দিতেই হবে।”
“শিল্প সাহিত্য, কৃষ্টি, সভ্যতা, সমস্ত ছাড়িয়েও মানুষের দৃষ্টি ঊর্ধদিকে। গভীরের মধ্যে সে খুঁজছে একটা পরম সান্ত্বনার বাণী, আশার আশ্রয় জীবনের চরম পরিণামের মধ্যে একটি সুদূর বেদনাকে সে নিরন্তর অনুভব করে।”
“প্রত্যেক মানুষের সঙ্গেই পৃথিবীর একটা দেনাপাওনা আছে। দুটি বন্ধন আমাদের স্বীকার করে নিতেই হবে, স্নেহের ও সেবার। সকল মহাপুরুষের জীবনের ইতিহাসে দেখতে পাই এই স্নেহ ও সেবার খেলা। মানুষকে ভালোবাসতে হবে এবং ভালোবাসা পেতে হবে, সেবা করতে হবে এবং সেবা নিতে হবে। মানুষের সেবাকে যে অস্বীকার করলো, যে মানলো না স্নেহের বন্ধন, সে হতভাগ্য বিষাক্ত করে গেল মানব-সমাজকে।”
” মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন হয় বাইরের প্রয়োজনে—বন্ধুত্বের প্রয়োজনে, সৃষ্টির প্রয়োজনে, স্বর্থের প্রয়োজনে।”
“মানুষ সেবায় বাঁচে না, নিজের শক্তিতে বাঁচে।”
” শোবার ঘরে বাইরের মানুষের প্রবেশ নিষেধ। আমি পছন্দ করিনে, আমার অনুপস্থিতিতে আর কেউ—যার সঙ্গে আমার আত্মিক যোগ নেই, এমন একজন কেউ আমার ঘরে এসে সময় কাটায়। ঘরে আমার টাকা নেই, সোনা নেই, দামী পোশাক নেই অথচ এমন কিছু আছে যা একান্ত নিজস্ব। আমার পরিচয়টা আছে সমস্ত ঘরময় ছড়ানো, আর কেউ সেখানে এসে দাঁড়ালে চমকে উঠি, ভয়ে আড়ষ্ট হই, লজ্জায় ঘরখানাকে ঢেকে রাখতে চাই। আমার বহুকালের অসংলগ্ন চিন্তা, উদ্ভট কল্পনা, অসম্ভব স্বপ্ন—সমস্তগুলো শোবার ঘরের সর্বত্র যেন চিত্রিত হয়ে রয়েছে। তাদের সঙ্গতিও নেই, সামঞ্জস্যও নেই। অসতর্ক মুহূর্তে বাইরের মানুষ হঠাৎ ঢুকে যদি তাদের দেখতে পায়?”
*”শিল্পী হচ্ছেন একাধারে দ্রষ্টা ও স্রষ্টা। তাঁর স্পর্শে সামান্য বস্তু হয়ে ওঠে অসামান্য, তিনি নিয়ে যান লোক থেকে লোকোত্তরে, সঙ্কীর্ণতা থেকে পরিব্যাপ্তিতে, জীবন থেকে মহাজীবনে।”