আচার্য বিজয়ীধর্ম সূরী ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি কত সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে বিষয়ে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি একজন আধ্যাত্মিক মানুষ ছিলেন। মানুষকে সত্যের পথ দেখানোর জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করতেন। তিনি ১৯২২ সালে মারা যান। মানুষকে দেওয়া তার কিছু বাণী নিচে উল্লেখ করা হল।
“মননে ও অনুভবে যা পরিচ্ছন্নতা জাগ্রত করে তাই হলো সঠিক ধর্মাচার। (কিন্তু) ভক্তিবিহীন ধর্মাচারের কোনো সার্থকতা নেই। বিবেচনা সহকারে ধর্মাচরণ যেমন ফলপ্রদ, তেমনই ধর্মাচরণ সহকারে তত্ত্ববোধ কার্যকরী। সদাচার ও প্রত্যয়হীন জ্ঞান দ্বারা লক্ষ্যে পৌঁছোনো যায় না।”
“যতক্ষণ তোমার অন্তঃকরণ বহির্মুখী ধারণায় আবৃত থাকবে, তুমি আধ্যাত্মতত্ত্বের স্বরূপ অনুধাবন করতে পারবে না। তাই আগে প্রয়োজন তোমার বাহিক্য ধারণাগুলি দূর করা।”
“সহনশীলতা না থাকলে অন্তঃকরণের গুণগুলি নির্জীব হয়ে যায়। পরচর্চা প্রবণতা ও নিজের মধ্যে শুভ সংস্কারগুলিকে অশুভ প্রভাবে নিম্নগামী করে দেয়।……মুহূর্তের ‘হঠাৎ-ক্রোধে’ মনের শান্তি বিঘ্নিত হয়ে যেতে পারে।”
“স্থৈর্যের প্রাধান্যে ইন্দ্রিয় উত্তেজনা প্রশমিত হয়, ন্যায়বোধ ও বিবেচনা বোধ এবং সর্বজীবে মৈত্রীভাব প্রসারিত হয়।”
“ভোগাসক্ত ব্যক্তির শিক্ষায় সর্বদাই স্বার্থপরতার দৃষ্টিভঙ্গী থাকে। একমাত্র নিরাসক্ত ব্যক্তি উপদেশ মাধ্যমেই মানুষ যথার্থ কল্যাণের পথে অগ্রসর হতে পারে।”
“জাগতিক ভোগের সকল অভিজ্ঞতাই আমাদের অতীতের কর্মফল অনুসারেই পেতে হয়। একমাত্র যেখানে কর্মে ‘আমি কর্তা’ ভাবটি নেই, সেখানে ফলভোগও নেই।”
“কোনো ব্যক্তির জাগতিক বিন্যাসে যতই উচ্চ-ভূমিকা থাক, যতকাল তার চেতনায় (অহংবোধক) মায়াবদ্ধতা থাকবে, সে জন্ম-জন্মান্তর ধরে বিস্তারিত এ ভবসাগর পার হতে পারবে না।”
“প্রতিটি কাজ করা উচিত স্থান, কাল, পাত্র ও ঔচিত্যবোধের বিবেচনায়। এই চারটিকে যে অবহেলা করে, সে যত বড় পণ্ডিত বা চিকিৎসক কিংবা বুদ্ধিজীবী হোক, তার কর্ম বিঘ্নিত হবেই।”
“যদি পছন্দের বিষয় লাভ করো, উল্লসিত হয়ো না, যদি সেটিকে ছাড়তে বাধ্য হও, উদ্বেলিত হয়ো না।……তেমনই যদি অপছন্দের বিষয়ে সঙ্গ দিতে বাধ্য হও বিব্রত হয়ো না, আবার সেটি থেকে রেহাই পেলেও উচ্ছ্বসিত হয়ো না।”
“সর্বদা মনে রেখো, তুমি যেমন মানসিকভাবে সুখ ও দুঃখ অনুভব করো, প্রত্যেকেরই তাই হয়। সুতরাং নিজেকে যেমন ভালোবাসো, সবার প্রতিই তদনুরূপ সহানুভূতিতে ব্যবহার করো ।”
“দন্ত, ঔদ্ধত্য ও অহং-অভিমানের মতো চিত্ত রোগকে দূর করতে বিনয় নম্রতা মহৌষধের মতো কাজ করে।”
“তুমি যদি কোনো দোষ করে থাকো, কেউ তোমাকে দোষারোপ করলে তার প্রতি কৃতজ্ঞ থেকো, কারণ সে তোমার অপূর্ণতাটাই দেখিয়ে দিচ্ছে। আর যদি দোষ না করে থাকো, অথচ সে নিন্দা করে, তবে ক্রোধ না করে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হও। কারণ বেচারা মিথ্যা নিন্দা করে নিজের পাপ কর্মের বোঝাই বাড়াচ্ছে। ক্ষমাশীল হও।”