স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ ১৮৬৫ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ২৪ পরগনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইনি শ্রীরামকৃষ্ণের একজন বিশেষ শিষ্য ছিলেন। এর ছোটবেলার নাম ছিল সারদাপ্রসন্ন মিত্র। সন্ন্যাস গ্রহণ করে তিনি এই রামকৃষ্ণ এবং স্বামী বিবেকানন্দের সানিত্য লাভ করেছিলেন। অবশেষে ইনি ১৯১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আমেরিকান ক্যালিফোর্নিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন।
“এই জগৎ যতোই দ্বন্দ্বময় হোক, প্রতিটি নরনারীর মধ্যে সুপ্ত রয়েছে এই দশাকে নিজ জীবনে রূপান্তরিত করে দ্বন্দ্বাতীত আত্মবোধে জাগৃতির। প্রয়োজন হলো জীবনের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন। তাহলেই (বহির্মুখীনতার বিপরীতে অন্তর্মুখী মননে) মানুষ লাভ করবে দিব্য স্থিতিবোধ। ব্রহ্মচর্যের মধ্য দিয়েই ঘটতে পারে এই লক্ষ্যের সাধনা ও সিদ্ধি।”
“মনুষ্যপ্রজাতি শ্রেষ্ঠ, কারণ এই স্তরেই একমাত্র আছে মোক্ষ বা আত্মজ্ঞান লাভের শ্রেষ্ঠ উপায় ।….অথচ এমন সুযোগকেও মূর্খের মতো হারাচ্ছে বহু মানুষ। মনুষ্যজন্মের মূল্যবোধটি না চিনে সে ব্রহ্মাত্মক কর্মের দ্বারা যে কী অবর্ণনীয় দুর্দশার বাতাবরণ সৃষ্টি করছে তার ঠিক নেই। … সত্যানুসন্ধিৎসা তো দূরের কথা, ভোগাসক্ত মানুষ ক্রমেই নিমজ্জিত হয়ে চলেছে অজ্ঞানতার অন্ধকারে।”
“জাগতিক আকর্ষণ এতো প্রবল যে, মানুষ মনুষ্যত্বের জীবনাদর্শ সহজেই বিস্মৃত হয়। বিষয় ও ব্যক্তি থেকে মন তুলে এনে যখন মানুষ আত্মস্থ হয় তখনই মায়ের কথা মনে হয়। মা-কে ডাকলে তাঁর খেলার রহস্য জানা যায়। মা-ই মানবজীবনের মূলীভূত সত্তা। আমরা তাঁরই ইচ্ছায় সব কিছু করি, তাঁর হাতের পুতুল মাত্র— এইটি জানলেই জীবনের রহস্যভেদ হবে ‘শ্রেয়ঃ’ লাভ হবে।”
“প্রকৃত ‘সভ্যতা’ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক আদর্শ অনুসারে, অন্তর প্রকৃতির উৎকর্ষ সাধনে সক্রিয় হয়। ঐহিক জীবনের কোলাহল শান্ত না হলে, আধ্যাত্মিক জীবনের অনাহত আহ্বান শ্রুতিগোচর হয় না। জীবন যতোই বহির্মুখ হয় ততোই অভাব- অভিযোগ বাড়ে। যখন কোনো মানুষের বিবেক জাগে, তখন সে দেখে যে, (প্রকৃত) সত্য ও সুখ অজ্ঞান দ্বারা আবৃত। রহস্যভেদ হলেই সত্যদর্শন হয়।”
“জপ-ধ্যান করতে কষ্টবোধ হলেও (জপ-ধ্যানের অভ্যাস করা) বন্ধ করবে না।”
“ঠাকুর ছাড়া পথ নেই। তিনি বল, বুদ্ধি, ভরসা সবই। তাঁকে কোনোমতেই ছাড়বে না। খুঁটি ছাড়লেই পড়ে যাবে।”