গৌরী মাতা ১৮৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের হাওড়ায় জন্মগ্রহণ করেছেন। ইনি ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের একজন প্রধান শিষ্য। তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদা দেবীর সংস্পর্শে ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার বিষয়ে এনার গভীর আগ্রহ ছিল। অবশেষে ইনি ১৯৩৮ সালের মার্চ মাসে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এনার কিছু উপদেশ নীচে উল্লেখ করা হলো। –
“ভগবানকে যে কোনো ভাবে ডাকলে তাঁর কৃপা হয়। সেই কৃপার সঙ্গে সঙ্গে অষ্টসিদ্ধি প্রভৃতি ওই সাধককে পরীক্ষা করবার জন্য উপস্থিত হয়, যদি ওই সমস্ত ঐশী কোনো ব্যাপারে সাধক মুগ্ধ হয়, তবে সে আর শুদ্ধাভক্তির অধিকারী হতে পারে না।”
“গৃহীই হও, আর সন্ন্যাসীই হও, আসল কথা মন। মন সাচ্চা তো সব সাচ্চা। মনটি খাঁটি হলে তবে ভগবানের কৃপালাভ হয়। – তাঁকে না ডাকলে, তাঁর কৃপা না হলে মানুষের জীবন দুঃখের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সকল কাজের মধ্যেই তাঁকে স্মরণ করবে। ব্যাকুল হয়ে তাঁকে ডাকবে, যেন তাঁর পাদপদ্মে শুদ্ধাভক্তি হয়।”
“তাঁকে পেতে হলে সাধন-ভজন চাই। (অহংঅভিমানী) মানুষ চায় ফাঁকি দিয়ে— পার হতে। তা কি কখনো হয়? সবটা মন দিয়ে তাঁকে ভালোবাসলে, একেবারে মানুষের মতোই তাঁকে প্রত্যক্ষ করা যায়।”
“স্বার্থত্যাগ করে সৎ-চিৎ-আনন্দ লাভের যোগ্য হও।”
“মানুষ হয়ে জন্মেছো; এমনভাবে চলো না, যাতে প্রকৃত ‘মানুষ’ হবার পথে বাধা পড়ে। ….তোমরা সংযমী হও। সংযম না থাকলে কোনো সুশিক্ষা দাঁড়াবে না।”
“শুধু ভালো মানুষ হলেই চলবে না, আত্মরক্ষার জন্য মেয়েদের শক্তিমতীও হতে হবে। ….সমাজের সুশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব তাদেরই বেশী। বাইরের চাকচিক্যে সৌন্দর্য বাড়ে না। আসল সৌন্দর্য দেহ-মনের পবিত্রতায়।”
“যদি প্রকৃত শান্তি ও আনন্দের সন্ধান পেতে চাও তবে সব (আসক্তি) ছেড়ে ভগবানকে ডাকো। পেছন ফিরে চেয়ো না। সকল রকম বিষয়বাসনা না ছাড়লে সে পথে এগোনো যায় না।”
“ধর্মলাভের পথে যোগ্যতার বিচারে নারী-পুরুষে কোনো ভেদ নেই।”
“নিষ্কামভাবে কাজ করে যাবে। যশ আর প্রতিষ্ঠাকে বিষ্ঠার ন্যায় ঘৃণা করবে। পরের সেবা করতে এসে যদি মনের কোণেও আত্মপ্রশংসার আকাঙ্খা জাগে, তবে সাধক জীবনে তা আত্মহত্যারই তুল্য জানবে।”
“ভগবানকে যে সত্যিকারের ভালোবাসতে পারে, ভগবান কি কখনো তাকে দেখা না দিয়ে থাকতে পারেন। তিনি ভক্তের কাঙ্গাল। ভক্ত ব্যাকুল হয়ে তাঁকে ডাকলে তাঁর দিকে একটু এগিয়ে গেলে, তিনি দশ-পা এগিয়ে আসেন। তাঁকে পাওয়া অসম্ভব, অথবা খুবই কঠিন— এমন কথা মনে করো না নিজেকে একবার ভুলে যে তাঁকে সর্বস্ব দিয়ে দিতে পারে, তেমন ভক্তের কাছে তাঁকে ধরা দিতেই হয়।”
“ঠাকুর দেবতারা আসলে এক, কোনো ভেদ নেই।”
“অধিকাংশ মানুষের ঘোলা মন, দৃষ্টি খাটো, তাই এত ভেদবুদ্ধি, কেবল ঝগড়া করে মরে। (অসত্রাও) ঠিক পথে আসবে। তবে দেরীতে আসবে। কর্মবিপাকে ঘুরতে ঘুরতে যখন প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে এদের জটিলতার পাক খুলে যাবে, তখন এরা আসবে।”