Motivation Shayari in Bengali by Srima Meera | শ্রীমা মীরা ২০টি মোটিভেশন বাণী

শ্রীমা মীরা ১৮৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে এনার সঠিক নাম হলো ব্লাঞ্চ রাচেল মীরা আলফাসা। শ্রীমা হল ভারতে থাকাকালীন এনার ছদ্মনাম। স্বামী বিবেকানন্দের বই পড়ে তিনি খুবই প্রভাবিত হয়েছিলেন। এবং ভারতীয় ধর্মতত্ত্ব, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে ভালোভাবে জানার এবং বুঝার জন্য ১৯১৪ সালে ভারতে আসেন।

 তিনি ধ্যান, প্রার্থনা ও আধ্যাত্মিক সাধনা করতেন ঈশ্বরকে উপলব্ধির জন্য। অবশেষে ইনি ১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের পন্ডচেরিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। নিচে এনার কিছু উপদেশ উল্লেখ করা হলো।- 

"মহত্তম সাহসের একরূপ হলো নিজের দোষ স্বীকার করতে পারা।"
Photo by pexels.com

“প্রকৃত অধ্যাত্মজীবন শুরু হয় তখনই যখন তোমার চৈত্যসত্তায় (অর্থাৎ, চিত্তের আত্মমুখী বৃত্তিতে) ভগবানের সঙ্গে যোগ স্থাপিত হয়। চৈতন্যসত্তা জাগ্রত হলে, তোমার অন্তঃকরণে এমন কিছু বোধ আসবে যাতে সব সময়েই (ভাগবতী) অনুভবের শক্তি থাকবে এবং তা-ই তোমাকে কাজ করিয়ে নেবে, তোমার জীবনকে গড়ে তুলবে।”

“মানুষ পূর্ণতার জন্য তৃষ্ণার্ত। কিন্তু সেই পূর্ণতা বস্তুতঃ অহংকেন্দ্রিক আকাঙ্খাগত মানবীয় পূর্ণতা, যা দিব্যপূর্ণতার পথে বিঘ্নমাত্র। যোগের পথে চাই সেই পূর্ণতা, যার মধ্যে রয়েছে, জগতের মাঝেই সনাতন সত্যকে প্রকটিত করার প্রগতিশীল শক্তি। 

“যা করো সর্বদা সযত্নে করো। তাড়াতাড়ি করার চেয়ে সুষ্ঠুভাবে করা ভালো। ঝোঁকের বশে কাজ করবে না। ধীর, স্থির সমতা নিয়ে ঝড়-ঝাপটাকে চলে যেতে দেবে। তুচ্ছ কলহ ও বিদ্বেষের ঊর্ধে উঠে দাঁড়াবে। প্রেম-শক্তির মধ্যে জেগে ওঠো।”

“জগন্মাতার কৃপা ও স্নেহ সকল সন্তানের ওপরই সমভাবে বর্ষিত হয়, কিন্তু প্রত্যেকে তা লাভ করে নিজের স্বভাব ও গ্রহণক্ষমতা অনুযায়ী।”

“সুখপ্রদ ও শুভ সম্ভাবনাময় জীবনের জন্য অপরিহার্য হলো, নিষ্ঠা, নম্রতা, অধ্যবসায় আর প্রগতির জন্য অদম্য আগ্রহ, সর্বোপরি এই বিশ্বাস থাকা চাই যে, নিজের মধ্যে লক্ষ্য পূর্তির জন্য রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা।”

“দুর্ভাগ্যের চেয়ে সাফল্য কঠোরতর পরীক্ষা। সাফল্যের সময়েই সজাগ থাকতে হয়, যাতে “আমিত্বে”র (অভিমানের) ঊর্ধে উঠে দাঁড়াতে পারো।”

“প্রকৃত আধ্যাত্মিকতা জাগতিক জীবনকে পরিহার করে না, বরং গড়ে তোলে দিব্য পূর্ণতায়। দিব্যজীবন কোনো বাহ্যিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে না। সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন সাধারণ ধরনের যে কাজেই নিযুক্ত থাকো, যদি সত্যবোধে সত্যনিষ্ঠভাবে থাকো, তাতেই দিব্যজীবন লাভ করতে পারবে।”

“আসল পথ হলো ভগবানে আত্মসমর্পণ, সম্পূর্ণরূপে বিনা শর্তে। আত্মনিবেদনে অবিচল ও অটুট শ্রদ্ধাবান থাকা চাই। …. সন্দেহকে আদৌ প্রশ্রয় দেবে না। তোমার যা কিছু অভাববোধ, প্রয়োজনবোধ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা অর্থাৎ যা কিছু নিয়ে তোমার সীমিত ব্যক্তিত্ব তার সমস্তই দূর করে বিনা বিচারে যদি পূর্ণভাবে নিজেকে সমর্পিত করো তাহলে সেই শান্তি পাবে অবশ্যই, যার ফলে সব যন্ত্রণা তখন নিঃশেষ হয়ে যাবে।”

“যোগসাধনার বহু পথ বিদ্যমান। প্রত্যেক মানুষ তার নিজ নিজ সংস্কার অনুযায়ী পথ ঠিক করে নেয়। সাধারণতঃ পথের ইঙ্গিত অপ্রত্যাশিতভাবে আপনিই উপস্থিত হয়।”

“আধ্যাত্মিক উন্নতি ও জ্ঞানোদয়ের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সময় সীমা নেই। ভগবানকে চাইবে শুধু ভগবানেরই জন্য। শক্তি নাম যশ বা মর্যাদা কিংবা আত্মগৌরবের জন্য নয়। বিশ্বস্ততা ও নৈপুণ্যসহ কাজ করা ভগবৎ সেবার একটি প্রকৃষ্ট পথ। সব নির্ভর করবে, তুমি কী মনোভাব নিয়ে কাজটি করো তার ওপর। স্বনিষ্ঠ মনোভাব নিয়ে কাজ করাও একরকম ধ্যান।”

“উদ্দীষ্ট পূর্ণতার পর্যায়ে দেখা যায় সত্যের চারটি বিভাব, প্রেম, জ্ঞান, শক্তি ও সৌন্দর্য। সত্যের এই চারটি গুণই সাধকের সত্তায় প্রকটিত হয়। তখন চৈতন্যসত্তা হয়ে ওঠে যথার্থ ও রিশুদ্ধ প্রেমের বাহক, মন অভ্রান্ত প্রজ্ঞার; প্রাণ প্রকাশ করবে অজেয় শক্তি ও তেজ এবং জড়ীয় স্তরে ফুটে উঠবে সৌন্দর্য ও ছন্দময় পূর্ণতা।”

“অহং মনোভাব দূর করার একমাত্র উপায় হলো অস্পৃহা ও প্রার্থনা। … সর্বতোভাবে অনুভব করো যে ভগবানকে ও তাঁর কার্যপ্রণালীকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা মানুষের নেই। আত্মশক্তি হলো আসলে ভগবানেরই শক্তি।”

“প্রকৃতপক্ষে খুব কম মানুষই নিজেরা সত্যিই কী চায় তা ঠিক জানে। তারা সর্বদাই কোনো না কোনো চাহিদা পূরণে ব্যস্ত। যে মুহূর্তে একটি বাসনা পূর্ণ হলো, অমনি অন্য একটির দিকে তারা ছোটে। এইভাবে অনেক অন্বেষণের পর, অনেক ভুল-ভ্রান্তি-হতাশার পর, কম বেশী অনেক কষ্ট সহ্যের পর, কোনো এক সময় সজাগ হয় এবং জিজ্ঞাসা করে, এই অজ্ঞানতা, চাহিদা ও কামনার বন্ধন থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোনো উপায় আছে কিনা। বস্তুতঃ এই সময়টাই হলো সেই দিব্যক্ষণ, কি যখন সে দুহাত প্রসারিত করে বলতে পারে, ‘এখন আমি (নিজের দশাটি) বুঝতে পেরেছি; আমাকে গ্রহণ করো ও সত্যের পথে পরিচালিত করো’।”

“যখন নিজের অন্তরের গভীরে প্রত্যক্ষবোধে বুঝবে যে, তুমি প্রকৃতপক্ষে (অর্থাৎ স্বরূপতঃ) বন্ধনশূন্য (দ্বন্দ্বাতীত) চেতনা, তুমি সকল জীবের ও ঘটনার দ্বারা অপ্রভাবিত, শোক, বিরাগ বা ক্রোধ তোমাকে কোনোভাবেই স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারে না, তুমি সর্বদাই আছো শান্ত ও নিস্তব্ধ সন্তোষের স্থিতিতে, তখনই জানবে তোমার আত্মবোধের মুক্তি হয়েছে। যখন দেখবে কোনো কিছুতেই আর তোমাকে বিচলিত করতে পারছে না, আর সর্বদাই তুমি এক আনন্দবোধের মধ্যে রয়েছো, তখনই (চৈতন্যসত্তায়) বুঝবে যে, তুমি চেতনার উত্তরণ লাভ করেছো।”

“মহত্তম সাহসের একরূপ হলো নিজের দোষ স্বীকার করতে পারা।”

"মহত্তম সাহসের একরূপ হলো নিজের দোষ স্বীকার করতে পারা।"

“প্রকৃত ‘ লাভ হয় আত্মচৈতন্যের বিশ্বাত্মকবোধে। বিশ্ববৎ বৃহৎ ‘আমি’  হয়ে যাও, তাহলেই থাকতে পারবে বিশ্রান্তিতে। কর্মের ঘনঘটায়, দ্বন্দ্বের কেন্দ্রস্থলে, সকল উদ্যমের গভীরেও অনুভব করবে অসীম অখণ্ডের অনন্ত প্রশান্তি।”

“সর্বাবস্থায় আত্মার সমত্ববোধ – এই-ই হচ্ছে নির্দায় চেতনার ভিত্তি, – শান্তিপূর্ণ মহাশক্তির অনুভূতিতে স্থিতি।”

“একমাত্র পার্থিব জীবনকালেই প্রগতিশীল বিবর্তন সম্ভব। চৈতন্যসত্তাই আপন বিবর্তন ও ক্রমবিকাশের পন্থা খুঁজে নিয়ে এই প্রগতিধারাকে এক জন্ম থেকে অপর জন্মে বহন করে নিয়ে যায়।”

“ভগবানের ইচ্ছাই সব পরিচালিত করে। তাঁর শক্তিই কাজ করে। “যা হওয়ার তা হবেই” – এই নীরব নিশ্চয়তা সহকারেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

“ভগবানের অস্তিত্ব এক অখণ্ড, অমর, অপরিবর্তনীয় সত্য।”

Leave a Reply