শ্রীমৎ নিত্যগোপাল দেব ১৮৫৫ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি কালীঘাটে গিয়ে সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ ও সমস্ত ধর্মের মানুষকে সমান চোখে দেখতেন। ইনি মহানির্বাণ মঠের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অবশেষে তিনি ১৯১১ সালে ভারতের কলিকাতায় মারা যান। এনার কিছু উপদেশ নীচে উল্লেখ করা হলো।-
“এমন অনেক লোক আছে যারা শাস্ত্রের অর্থ কেবল ভাষায় জানে, কিন্তু মর্মার্থ জানে না। সুতরাং তারা অজ্ঞানের কার্যও অনেক করে।….শাস্ত্রের মর্মার্থ যে বোঝেনি সে এক প্রকার মূর্খ । …. কতকগুলি গ্রন্থের অর্থ করতে পারলেই পণ্ডিত বলা যায় না।”
“যার চিত্তশুদ্ধ হয়নি সে স্নান করে ধৌত বস্ত্র পরিধান করলেও শুদ্ধ হতে পারবে না।….অন্যকে জ্ঞান দেবার জন্য যে ব্যস্ত হয়, তার মতো অজ্ঞানী নেই।”
“ধর্ম সম্বন্ধে সাম্প্রদায়িকতা পরিত্যাগপূর্বক যিনি যে কথা বলেন, তাই শিরোধার্য ও আদরণীয়।….ধর্ম যেন একটি বৃক্ষ; নানা মত যেন তার নানা শাখা প্রশাখা। ধর্মের নিগূঢ় কথা সকলের কাছে বক্তব্য নয়। …. প্রকৃত ধার্মিক ভগবান-সম্বন্ধীয় সকল মতই মান্য করেন।”
“আত্মজ্ঞান ব্যতীত জীবন্মুক্তি হয় না।…..জীবত্বের নাশ হলে কু-প্রবৃত্তিও থাকে না, সু-প্রবৃত্তিও থাকে না। জীবত্বের (অহং স্বতন্ত্র্যবোধের) নাশই পূর্ণ নিবৃত্তি।….. নির্বাণের পর যে শান্তি, তা-ই পরম শান্তি।”
“পাণ্ডিত্যের সঙ্গে জ্ঞানমিশ্রিত প্রেমভক্তি থাকলে সে পাণ্ডিত্যের তুলনা হয় না।”
“লোকের কাছে প্রশংসিত হওয়ার অভিলাষে দান করা অকর্তব্য।”
“বিদ্বান মূর্খকে বিদ্বান করতে পারে। কিন্তু মূর্খ বিদ্বানকে মূর্খ করতে পারে না। জ্ঞানী অজ্ঞানীকে জ্ঞানী করতে পারে, কিন্তু অজ্ঞানী জ্ঞানীকে অজ্ঞানী করতে পারে না।ভক্ত অভক্তকে ভক্ত করতে পারে, কিন্তু অভক্ত ভক্তকে অভক্ত করতে পারে না ।”
“একখানি সীমাবিশিষ্ট ধর্মপুস্তকে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় সমস্ত তত্ত্ব নিহিত থাকতে পারে না। ঈশ্বরের ন্যায় ঈশ্বরীয় তত্ত্বেরও সীমা নেই।”
“যুক্তির সঙ্গে দিব্যজ্ঞানের বিশেষত সংশ্রব। যে শক্তি দ্বারা জ্ঞাতব্য বিষয় নিশ্চিতরূপে অভ্রান্তরূপে প্রমাণ করা যায় তাই যুক্তি।….যখন বিবেকবশতঃ নিজের (সূক্ষ্ম) যুক্তি স্ফুরিত হয়, তখনই তার দ্বারা ধর্মতত্ত্ব নিশ্চিতরূপে অবধারিত হয়ে থাকে।”
“যাঁকে বহুলোকে মান্য করে অথচ তাঁকে কেউ কটু কথা বললেও কটু কথা বলেন না, তিনি সত্যিই মহৎ মানব।”
“জীবনে মমত্ব যতক্ষণ, ততক্ষণ অবিদ্যামায়ার অধিকারভুক্ত থাকতে হয়।”
“মায়া চাবির মতো। চাবি দ্বারা যেমন দ্বার বদ্ধ ও মুক্ত দু-ই হতে পারে, তেমনই মায়া দ্বারা উভয়েই হয়। মায়া (অবিদ্যায়) জীবনবন্ধনী এবং (বিদ্যায়) জীবন মোচনী উভয়ই।”
“ব্রহ্ম যেমন আদি, তদ্রূপ ব্রহ্মময়ীও আদ্যা; যেমন অনাদি, তদ্রূপ তাঁর শক্তি অন্যাদ্যা।”
“বালকের অনেক লক্ষণ ‘সহজ’ (জীবন্মুক্ত) মানুষে দেখতে পাওয়া যায়। তাদের উভয়ে প্রভেদ এই যে, সহজ মানুষ ‘সজ্ঞান বালক’ আর সাধারণ বালক ‘অজ্ঞান’ বালক।”
“রূপে মোহিত হলে, সে মোহ বেশিকাল স্থায়ী হয় না, কিন্তু গুণে হলে দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়। সকলের চেয়ে শ্রীভগবানের রূপ গুণে মোহিত হওয়াই ভালো। হরিচরণে যার লোভ হয়, তার অন্য কিছুতেই লোভ থাকে না।”